আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা। উত্তর কলকাতার সাহিত্য পরিষদ স্ট্রিট ও বিধান সরনীর সংযোগ স্থলে প্রদীপ কুমার দাসের হাত ধরে গড়ে ওঠে ছোট্ট একটা চায়ের দোকান। ১৯৮২ সাল নাগাদ প্রদীপবাবুর মাথায় আসে লেবু চা করলে কেমন হয়। যেই ভাবা সেই কাজ। শুরু হয় ভারতের প্রথম মশালাদার “লেমন টি” বা লেবু চা। তার বেশ কয়েক বছর পর থেকেই পুরো কলকাতা জুরে শুরু হয়েছিল লেমন টি বা লেবু চা। শুধুমাত্র কলকাতা নয় সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে লেবু চায়ের স্বাদের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। রঙমহল, বিশ্বরূপা , রঙ্গনা থিয়েটার পাশে থাকায় বিভিন্ন অভিনেতা, অভিনেত্রীরা এখানে এসেই “লেমন টি”-তে চুমক দিতে দিতে এই চায়ের দোকানে আড্ডা দিতেন। অতিথিদের বরণ করে নেওয়াই ছিল প্রদীপবাবুর একমাত্র খেয়াল। আর সেই কারণেই মাথা খেলিয়ে এই চায়ের দোকানের নাম তিনি রাখেন “অতিথি”। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনুপ কুমার, আকালের সন্ধানের লেখক অমলেন্দু চক্রবর্তী, চিত্র পরিচালক সরোজ দে ছাড়াও আরও অনেক বিশিষ্টজনেরা এই “অতিথি”-তে এসে মশালাদার “লেমন টি” বা লেবু চায়ের স্বাদ নিতে আসতেন। ২০১৯ এর ১৬ই এপ্রিল প্রদীপবাবুর জীবনের প্রদীপ নিভে গেল। তার পর থেকেই ওনার সহধর্মিণী গায়ত্রী দাস দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে আজও এই “অথিতি” চায়ের দোকান এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সকাল সাড়ে নয়টায় দিকে পাইকপাড়া থেকে এসে দোকান খোলা দুপুরে কিছুক্ষনের বিরতি রেখেই বিকেলে সাড়ে তিনটা দোকান খুলে রাত নয়টা নাগাদ বন্ধ করে আবার পাইকপাড়া ফিরে গিয়ে ঘরের কাজ সেরে রাত বারোটার দিকে বিছানায় পিঠ ঠেকানো, এই গায়ত্রী দেবীর রোজের রুটিন। গায়ত্রীদেবী আমাদের জানালেন “এক সন্তানের অভিজিৎ এর মা”। পুত্রবধূ পামেলা দাস ও একমাত্র নাতি অভিয়ান দাস – কে নিয়ে একটা ছোট্ট সুখী পরিবার। ছেলে অভিজিৎ বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত।” তিনি এও জানান “প্রদীপ বাবু মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। প্রদীপবাবুর সাধের “অতিথি” চায়ের দোকান কি ভাবে চালিয়ে যাবেন। তারপর প্রদীপ বাবুর পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পরই মনের জোরে আবার চালু করে দেন। “। আজকের দিনেও সেই দোকানে কিন্তু স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। আকাশবাণীর এফ এম এর গান শুনতে শুনতে “চা” পিপাসুরা এখান থেকে লিকার চা, মশালাদার লেবু চা ও দুধ চায়ের স্বাদ নিতে আসেন। তবে সেই থিয়েটার পাড়াও আজ নেই, সেই অভিনেতা -অভিনেত্রীরা এবং বিশিষ্টজনেরা আজ এই জগতে নেই। তবে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখানে এসে গায়ত্রী দেবীর হাতের তৈরী “চা” এর কাপে চুমুক দিতে দিতে চায়ের স্বাদ নেন। প্রদীপবাবুর জীবনের প্রদীপ আজও জ্বালিয়ে রেখেছেন গায়ত্রীদেবী।
![](https://bangabarta.com/wp-content/uploads/2024/07/WhatsApp-Image-2024-07-03-at-6.41.39-PM-576x1024.jpeg)
![](https://bangabarta.com/wp-content/uploads/2024/07/WhatsApp-Image-2024-07-03-at-6.41.39-PM-1-576x1024.jpeg)
![](https://bangabarta.com/wp-content/uploads/2024/07/WhatsApp-Image-2024-07-03-at-6.41.38-PM-1-576x1024.jpeg)