ক বছর হল মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘হিরণ্ময়’ নীরবতার সমালোচনা করে আসছেন বিরোধীরা। লোকসভার চলতি অধিবেশনেও বিরোধীরা মণিপুর নিয়ে মোদীর ‘নীরবতা’র সমালোচনা করেছেন। মঙ্গলবার লোকসভায় মোদীর ভাষণের সময়েও বিরোধীপক্ষের সাংসদের অনবরত টেবিল চাপড়ে ‘মণিপুর-মণিপুর’ বলে চিৎকার করে গিয়েছেন। তার আগে সোমবার প্রায় ফাঁকা লোকসভায় মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ এ বিমল আকোইজাম।
অবশেষে মণিপুর নিয়ে মৌনব্রত ভাঙলেন মোদী। বুধবার রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘মণিপুর নিয়ে যাঁরা আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, মণিপুরই একদিন তাঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।’’ কারণ ব্যাখ্যা করে মোদী বলেন, ‘‘কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলে মণিপুরের পরিস্থিতি শোধরানোর নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। আর সেই চেষ্টায় ধীরে ধীরে সাড়াও দিচ্ছে মণিপুর। স্বাভাবিকত্ব ফিরছে সেখানে।’’
কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠনের পর বুধবার রাজ্যসভায় প্রথম ভাষণ ছিল মোদীর। সেখানে বিরোধীদের মণিপুর নিয়ে তোলা প্রশ্নের জবাব দেন মোদী। যদিও মোদীর কথার মাঝেই রাজ্যসভায় ‘ঝুট-ঝুট’ (মিথ্যা মিথ্যা) রব ওঠে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গেকে বলতে দেওয়ার দাবিতে সরব হন বিরোধীরা। সেই দাবি না মানায় রাজ্যসভা থেকে ওয়াক আউটও করেন তাঁরা। ‘বিরোধীশূন্য’ রাজ্যসভাতেই মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের ‘জবাব’ দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিরোধীদের কটাক্ষ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘এঁরা যে প্রশ্ন করেছেন, তার জবাব শোনার মত ধৈর্যও নেই এঁদের।’’ পরে বিরোধীদের উত্থাপিত নানা বিষয়ের পাশাপাশি মণিপুর নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
মোদী বলেন, ‘‘মণিপুরে স্বাভাবিকত্ব ফেরাতে সরকার ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। মণিপুরে এ পর্যন্ত ১১ হাজার এফআইআর দায়ের হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫০০ জনকে। ধীরে ধীরে হিংসাত্মক ঘটনা কমছে মণিপুরে। স্কুল-কলেজ খুলছে। এমনকি, কিছু দিন আগে যখন দেশের সমস্ত স্কুল-কলেজে পরীক্ষা হয়েছে, তখন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে মণিপুরেও।’
এর পরেই মণিপুর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার নিন্দা করে মোদী বলেন, ‘‘মণিপুরে যা হচ্ছে, তার শিকড় অনেক গভীরে। কংগ্রেসের মনে রাখা উচিত, মণিপুরে ১০ বার রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে হয়েছিল। কিছু তো কারণ ছিল, যার জন্য এমন করতে হয়েছিল। অথচ কংগ্রেসই এখন ওই বিষয়ে রাজনীতি করতে ব্যস্ত।’’ কংগ্রেসের শাসনকালেও যে মণিপুরে ‘অশান্তি’ হয়েছিল, তা মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘১৯৯৩ সালে মণিপুরে এই একই জিনিস হয়েছিল। পাঁচ বছর ধরে চলেছিল সেই অশান্তি। তাই আমি বলব, এখন মণিপুরের যা পরিস্থিতি, তার সমাধান করতে যদি কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াতে চান, আমি তাঁদের সাদরে অভ্যর্থনা জানাব। কিন্তু যাঁরা মণিপুরের আগুনে ঘি ঢালার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সতর্ক করব। কারণ, এটা করলে মণিপুরই একদিন ওঁদের প্রত্যাখ্যান করবে।’’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *