“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
গত পর্বের পর…
ব্যাপারখানা কি আরো দিনকয়েক পর অনিলের কাছে পুরো স্পষ্ট হয়ে যায়। কোর্ট থেকে একদিন উকিলমশায় এসে তাদের বাইরে বার করে বাংলো, গাড়ী, সমস্ত জিনিসপত্র, জায়গা, ব্যবসা সিজ করে চলে যায়। গজনানন্দজীর যে দু’ নম্বরি কারবার চলছিল তা আজ অনিলের কাছে ধরা পড়ে, ঈশ্বরের অসীম কৃপায় তারা ছাড়া পায়।
অনিলের বুকে মাথা রেখে শিউলী কাঁদতে থাকে, আজ তারা দুই স্বামী – স্ত্রী কোথায় পথে পথে ঘুরতে থাকবে তা কেউ জানে না। শিউলী অনিলকে বলে, “এখন আমরা কি করব ? যাবার সমস্ত রাস্তা আজ বন্ধ, কোথাও গেলে যে আশ্রয় পাবো সেটার রাস্তাও নেই। আমাদের কপালে সুখ বলে কিছুই ছিল নাই গো, আমাদের এমনি করে বাকী জীবন কাটাতে হবে।”
শিউলীর মাথায় হাত রেখে অনিল বলে, “দেখো, ঈশ্বর নিশ্চয় আছেন, নাহলে আমরাও দেশমুখজীর দু’নম্বরি কারবারে ফেঁসে যেতাম, আজ আমরা সেইখান থেকে বেঁচে গেছি যখন তখন নিশ্চয়ই কোন না কোন পথ আছেই। চলো আর দেরী না করে বেরিয়ে পড়ি। ” পাশে রাখা স্যুটকেশটা অনিল হাতে নেয়।
“চলো”।
দু’জনে এবার আবার নতুন করে পথে নামে। হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। এক বস্তির কাছে এসে দুজনে দাঁড়িয়ে পড়ে। অনিলকে শিউলী বলে, “আর আমি হাঁটতে পারছি না। তুমি কিছু একটা ব্যবস্থা করো।”
“দেখছি, আর একটু পথ গেলেই একটা দোকান দেখা যাচ্ছে ওখানে কিছু না কিছু খাবার পাওয়া যাবে। চলো ওখানে যাই। ”
“না তুমি যাও, আমি বরং এই গাছের তলায় একটু বসছি।”
“ঠিক আছে, আমি আসছি।” এই বলে শিউলীকে গাছের তলায় বসিয়ে অনিল দোকানের দিকে এগিয়ে যায় খাবারের খোঁজে।
দোকানে গিয়ে শুকনো মুড়ি ঠোঙা করে নিয়ে এসে শিউলীর হাতে দিয়ে বলে, “যাক, আজ রাতটা এই মুড়ি খেয়ে কাটাতে হবে।”
মুড়ি পেয়ে অভুক্ত প্রাণী দুটো কোনরকমে রাতের খাবার খেয়ে গাছের তলায় ঘুমিয়ে যায়। গাছের মৃদু মৃদু বাতাসে দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সামনে একটা জলের কল দেখতে পেয়ে সেইখান থেকে জল খেয়ে হাতমুখ ধুয়ে আবার অজানা পথের উদ্দেশ্যে দুজনে এগিয়ে যায়।
________