“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়:

কৃষ্ণাদেবী তাই দেখে তেতে উঠে, প্রতাপ চক্রবর্তীকে বলে, “দেখো, তোমাকে হাজারবার বলেছি এখনও বলছি, এমনভাবে তুমি দানছত্র খুলবে না। কিন্তু তুমি আমার কথা একবারও শুনোনি, তার ফল তুমি চোখের সামনেই দেখতে পেয়েছো। আমার অমন সুন্দর সোনার চাঁদের মতো ছেলেটা আজ ঘরছাড়া হয়ে গেল।” মুখে কাপড় ঢাকা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রান্নাঘরের দিকে চলে যায়।
দিন যতই যেতে থাকে কৃষ্ণাদেবীর চিন্তাও তত বাড়তে থাকে। রাতে ঘুমও হয় না। কৃষ্ণাদেবীর চোখের কোলে কালো দাগ হয়ে যায়। একদিন স্বামীকে বলে, “যাও না, একবার ছেলেটার খোঁজ নিয়ে এসো। হয়ত কোন আত্মীয়ের বাড়ীতে রাগ করে আছে, একবার গেলে তার খোঁজ তো পাবো। ছেলেটা কেমন আছে সেটা জানতে পাবো।”
“ঠিক আছে, দেখছি।” স্ত্রীর কথায় সম্মত হয়ে প্রতাপ চক্রবর্তী বলে, তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
এই ঘটনার দুই দিন পরেই প্রতাপ চক্রবর্তী ঘরে ঢুকে শোভায় বসে মাথায় হাত দিয়ে বসে যায়, তাই দেখে কৃষ্ণাদেবী জিজ্ঞেস করে, “কি হলো, তুমি এমন করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেন ? ছেলের কোন খবর পেলে ? কেমন আছে সে ? ভালো আছে ?”
স্ত্রীর কথার উত্তর দিতে গিয়ে বলে, “আমি অনেক জায়গাতেই ঘুরলাম কিন্তু তার কোনো খোঁজখবর পেলাম না। আমার মনে কেবল একটাই প্রশ্ন জেগে উঠছে, সে বেঁচে আছে তো ?”
স্বামীর মুখ থেকে ছেলের অমন কথা শুনে মা হয়ে কৃষ্ণাদেবী বলে, “না গো, অমন কথা মুখে আনতে নেই। আমার ছেলে দেখবে বেঁচেই আছে আর ভালোই আছে।” এই বলে কাঁদতে থাকে।