
“বিসর্জন”
সৌমেন মুখোপাধ্যায়

দুপুরে খাবার সময়ে মেয়ের ঘরের দরজায় বারকয়েক করাঘাত করার পর যখন কোন সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না তখন বাইরের দাওয়াতে বসে চিৎকার করে বলে, “খেয়ে নে বলছি, লক্ষ্মী আমার, তুই না খেলে আমি কি করে খাবো বল। তুই আমার সব, একবার দরজাটা খুল মা। উপাস দিয়ে থাকিস না, শরীর খারাপ হয়ে যাবে। আমার উপর রাগ করে থাকিস না। দরজাটা খুল, খেয়ে নে।”
যখন দেখলো দরজাটা আর খুলল না তখন বলতে লাগলো, ” বট্ট রাগ হয়েছে, এমন রাগ আমি ঢ়ের দেখেছি। দরকার নাই এমন মেয়ের, যখন মন চায় খাবেক আর না চায় খাবেক না। হুঁ। ” এই বলে খাবারটা নিয়ে গিয়ে রান্নাঘরে ঢাকা দিয়ে রাখে। নিজে এক গ্লাস জল খেয়ে দাওয়ায় একটা মাদুর পেতে শুয়ে পড়ে। এমনসময় একজন পরিচিতা রমনীর কন্ঠস্বর শুনে ধড়ফড় করে উঠে মাথায় কাপড় দেয়।
“বৌমা, ও বৌমা। বলি কেমন আছো ? খাওয়া – দাওয়া চুকলো।” বৃদ্ধা রমনী বাড়ীর ভিতর ঢুকে ঝর্ণাদেবীর পাশে বসে পান চিবোতে থাকে। আর মাঝে মাঝে পানের পিচ দাওয়ার একপাশে ফেলে নিজের দখলদারির বড়ায় দেখাতে থাকে।
“হ্যাঁ জ্যেঠিমা, আপনার খাওয়া হল ?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, বলি, মেয়েটা এখনও উপোস দিয়ে আছে না কিছু খেলো। যদি না খেয়ে থাকে তাহলে ওর জন্য কিছু খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।” মৃণাদেবীর এক নতুন আদুরে সুর।
“না না ঠিক আছে, উপোস করলে শরীর খারাপ হবে না। মেয়ের তেমন কোন রাগটাগ নাই জ্যেঠিমা। “
“না না বট্ট আছে। কেউ জানুক না জানুক আমি তো জানি ওর মনের কথা। ও এখন পুরো মা হতে চলেছে।”
“কি বললেন জ্যেঠিমা ? শিউলী মা হতে চলেছে? কিছুতেই নয়, এ আমি বিশ্বাস করি না। “
“পারতেই হবে বৌমা পারতেই হবে। নাহলে আমার এতদিনের সাধনা ভুল হবে না। আমি যা বলছি সব সত্যিই। নাহলে মেয়েকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখো কি বলে। এতদিন ধরে ঐ ছোড়াটার সাথে পিরিত করেছে আর এখন না বললে চলে।” কথাটা শেষ করে মুখের পানের পিচটা দাওয়ার একপাশে ফেলে দেয়। মৃণাদেবীর মুখ থেকে শুনে রাগে গসগস করে উঠে ঝর্ণাদেবী।