
“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়

যখন শব শয়ানে চাপানো হলো তখন শিউলীর পাশে থাকার মতো কেউ ছিল না একমাত্র লোভী বিড়াল ফটিক ব্যানার্জী ছাড়া।
“আহা, এমন করে দিদি চলে গেল আমি ভাবতেও পারিনি। দিদি আমাকে কত ভালোবাসতো। শুধু জরিমানার এক হাজার একশ এক টাকার সুদটা নাহয় একটুকু কম দিত, তা নয় …..” কথাটা শেষ না করেই জামা দিয়ে চোখগুলো মুছে নিয়ে আবার বলে, “আহা, এমন একটা ফুটফুটে দুধের মতো মেয়েকে রেখে চলে গেল, কি করে পাওনা টাকাগুলো মেটাবে তাই ভাবছি। আর কান্না করিস না মা, তোর মায়ের জমানো গয়নাগুলো আছে না, ওগুলো বিক্রি করে টাকাগুলো শোধ করে দিবি। এখন যাই, অনেক কাজ আছে।” এই বলে ফটিক হাতের ছাতাটা নিয়ে তার গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে যায়।
আজ শিউলী সম্পূর্ণ নিঃস্ব, নিরুপায়, সঙ্গীহীন। তার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। জোনাকির পোকার আলোয় রাতের আকাশের অন্ধকার কিছুটা দূর হলেও এই মেয়ের জীবনের অন্ধকার দূর করার আজ কেউ নেই। একা একা শ্মশানে বসে শিউলী কাঁদতে থাকে। এমনসময় তার মাথায় স্নেহের হাত পড়তেই শিউলী মাথা ঘুরিয়ে দেখে অনিল। “অনিলদা, তুমি এসেছো।” বলে অনিলের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে।
“চল শিউলী, আমরা এই জগতে আর থাকবো না। যেখানে আমাদের ব্যথা কেউ বুঝবে না সেখানে আমাদের জন্য একটুকুও জায়গা নেই। তার থেকে বরং শহরে গিয়ে রিকশা চালিয়ে মুটে গিরি করে আমাদের পেট ভরাবো।”
“হাঁ অনিলদা, তুমি ঠিক বলেছো। তার থেকে আমরা পালাই।”
“চল”।
“তার আগে মায়ের গহনাগুলো নিয়ে আসি। এই রাত’ই আমাদের সঙ্গী হবে, কি বলো।”
“হাঁ শিউলী।”