
“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
ট্রেনে সারারাত কাটানোর পর সঠিক গন্তব্যস্থলের কথা কারুর’ই ঠিক হয়নি, কোলকাতা না অন্য কোন এক জায়গা।
“এই যে মশায় শুনছেন। ” কামরার এক অচেনা ভদ্রলোক ডাক দেন।
“কি।” অনিল উত্তর দেয়।
“ক’টা বাজে বলতে পারেন?”
হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে অনিল বলে, “ভোর পাঁচটা।”
‘হাঁ, এত তাড়াতাড়ি সকাল হয়ে গেল। না না, আপনি ভুল দেখছেন।”
“না মশায় পাঁচটায় বাজছে।” ভদ্রলোকের সাথে সকালবেলায় বেশী কথা বলা ঠিক নয় ভেবে অনিল চুপ করে যায়।
ভদ্রলোক প্রশ্ন করে, “তা মশায় আপনারা কোথায় যাবেন ?”
অনিলরা এই কথাটায় চিন্তা করছিল কিন্তু তার কোন উত্তর খুঁজে পায়নি। তাই অনিল বলে, “কেন বলুন তো?”
ভদ্রলোক বলে, “না এমনি, আমি পেশাদার লোক কিনা, নন্দনপুরে একা থাকি, তাই ওখানে যেতে কোন সঙ্গী পাই এই আর কি।”
অনিল বলে, “না না, আমরা কোলকাতা যাবো। “
“কি বলেন কি, এটা কোলকাতা যাবে না, নন্দনপুরের উপর দিয়েই যাবে।”
অনিল বলে, “থাক মশায় থাক, আপনাকে আর বুঝাতে হবে না। আমি বুঝতে পেরেছি।”
ভদ্রলোক বলে, “আপনি বুঝতে পেরেছেন?”
অনিল বলে, “হাঁ, আমরা ভুল করে অন্য ট্রেনে উঠে গেছি।”
এবার ভদ্রলোক নেড়ে চড়ে বসে বলে, “আপনার নাম কি মশায়?”
” আমার নাম অনিল চক্রবর্তী”
“কি বলেন চক্রবর্তী, বামুন। হায় ভগবান তুমি আমাকে বাঁচালে। আপনি হাত দেখতে পারেন?”
“হাত!” কথাটা শুনে অনিল চমকে যায়। কোনকালে নিজের হাত কারুকে দেখায়নি, আবার সে জ্যোতিষীর কথা শুনলে রেগে যায়, সে দেখবে কিনা হাত?
“না মশায়, আমি কোন গনৎকার নয়।”
“আপনি পূজা করেন না ?”
“না”।
এবার ভদ্রলোক একটু রেগে গিয়ে বলে, “আপনি গায়ত্রী মন্ত্র জানেন তো ?”
এবার অনিল কিছু না বলে হেসে উঠে। তাই দেখে ভদ্রলোক বলে, “আপনি হাসছেন? আচ্ছা লোকতো আপনি, কিছুই যখন জানেন না তাহলে জানেনটা কি ?”
অনিল এবার শিউলীর দিকে তাকিয়ে বলে, “কি বলবো?”
শিউলী বলে, “জানি না।”
“জানি না বলে দেবো ?”
“আঃ, তুমি না।”
“ঠিক আছে।” তারপর ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি একজন বেকার মানুষ, বুঝলেন?”