Thursday, 1 May, 2025
1 May, 2025
Homeগল্প"বিসর্জন " - সৌমেন মুখোপাধ্যায়

“বিসর্জন ” – সৌমেন মুখোপাধ্যায়

“বিসর্জন “
সৌমেন মুখোপাধ্যায়

“হাঁ, বুঝতে পেরেছি। তা অনিলবাবু কোথায় যাবেন ভেবেছেন?” ভদ্রলোকটি বলে।
“দেখি, কিন্তু আপনার নামটা জানা হলো না।”
“আমার নাম।” এবার ভদ্রলোক হকচকিয়ে খায়।
“হাঁ”
“আমার নাম শ্রী শ্রী গজনানন্দ দেশমুখ।”
ভদ্রলোকের নাম শুনে শিউলীর কানে কানে অনিল বলে, “একেবারে দেশমুখ মানে দেশের মুখ। একেই তো ছোট দেখাচ্ছে তা কি করে দেশকে খাবে সেটাই ভাবছি। কি বলো শিউলী ?” অনিলের কথাটা শুনে শিউলী অনিলের হাতে একটা চিমটি কেটে বলে, “আঃ, কি হচ্ছে শুনতে পাবে না।”
“কিছু বলছেন অনিলবাবু?” ভদ্রলোকটি বলে।
“অ্যা, ওঃ, না না” বলে অনিল হাসতে থাকে, তাই দেখে দেশমুখবাবু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এই কান্ড দেখে শিউলী শাড়ীর খুঁটে মুখ ঢাকা দিয়ে হাসতে থাকে।
“আপনি হাসছেন আবার হাসছেন, না মশায়, আপনার সাথে আর আমি কথা বলবো না। আমার কথা শুনে সবাই হাসে। আমাকে পাগল বলে।” একটু রাগ অভিমানের সুরে দেশমুখবাবু বলে।
“তাই নাকি।” অনিল এবার হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“হাঁ”
“তাহলে আর হাসবো না। কি বলো শিউলী।”
“অঃ, আপনার নাম শিউলী, মানে শিউলী চক্রবর্তী।” দেশমুখবাবু বলে।
“না, শিউলী চক্রবর্তী নয় শিউলী চ্যাটার্জী।”
“শিউলী চ্যাটার্জী” নাম একবার মুখ থেকে বার করে দেশমুখবাবু যেন চমকে যায়। মাথার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে সিঁথিতে সিন্দুরের কোন চিহ্ন নেই। বলে, “আপনারা স্বামী স্ত্রী নন?”
জবাবটা শিউলী দেয়, “না”।
“তাহলে আপনাদের এখনও বিয়ে হয়নি তাই বলুন। বলি ঘর থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন বুঝি?” দেশমুখবাবু কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করে।
প্রশ্ন শুনে অনিল আর শিউলী নিরুত্তর। ঘটনাটা কিছু আন্দাজ করে দেশমুখবাবু বলে, “আপনাদের মত আমারও একই কেশ ঘটেছিল। আমাদের দুজনের বিয়েতে বাবা – মায়ের কোন মত ছিল না। কিন্তু ভালোবাসলে সেই ভালোবাসার মূল্য রাখতে হয়। তাই একদিন আমরা দুজনে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঘুরতে ঘুরতে চলে আসি এইখানে। ভগবানের কৃপায় একটা কাজ পেয়ে যায়। উনার্জন ভালোই হতে লাগল। দুজনে বেশ সুখেই ছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস দেখুন আমাদের সেই ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা গেল না।” এই বলে দেশমুখবাবু দু’হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে দেয়।
“কি হয়েছিল ?” শিউলী জিজ্ঞেস করে।
“স্ত্রীর হার্টের দোষ ছিল, সেটা আমার জানা ছিল না। একদিন কাজ করে সন্ধ্যার সময় বাড়ী ফিরে এসে দেখি স্ত্রী বুকের যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আমি প্রথমে সেঁক দিয়ে বুকের ব্যথা কমানোর চেষ্টা করলাম, তারপর গাড়ীর জন্য চেষ্টা করলাম কিন্তু সেইদিন একটাও গাড়ী পায়নি। সবাই কে হসপিটালে নিয়ে যাবার জন্য কত অনুরোধ করলাম কিন্তু কোন ফল হলো না। আমার চোখের সামনে আমার প্রাণের মানুষকে চলে যেতে দেখলাম। ” এই বলে দেশমুখবাবু ছোট্ট শিশুর মতো কেঁদে উঠল।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন