কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
ফের নাগরাকাটায় চিতাবাঘের হামলা। প্রাণ গেল এক কিশোরের। মৃতের নাম অস্মিত রায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে আতঙ্ক ছড়ায় নাগরাকাটা খেরকাটা বস্তিতে। চিতাবাঘের হামলায় একের পর এক মৃত্যুতে বন দফতরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধেয় নাগরাকাটা ব্লকের খেরকাটা বস্তিতে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল বছর বারোর অস্মিত। আচমকা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে চিতাবাঘটি। টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলের দিকে। আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখন চিতাবাঘটি পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কিশোরকে শুলকাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনঃ উল্টো পথে হাঁটল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়! আজ বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থাকছে না ছুটি
মৃতের বাবা শত্রুঘ্ন রায়ের কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা গ্রাম। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার পরও কেন বন দফতর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নজরদারি নেই? ঘটনার খবর পেয়ে ডায়না ও খুনিয়া রেঞ্জের বনকর্মীরা এলাকায় পৌঁছান। নাগরাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় কুজুরও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
গত ছয় মাসে ডুয়ার্সে চিতাবাঘের হামলায় একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে গত ১৮ জুলাই বানারহাটের কলাবাড়ি চা-বাগানে। সেদিন চা-বাগানের শ্রমিক কলোনি থেকে তিন বছরের এক শিশুকে টেনে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে চিতাবাঘ। ওই ঘটনার পর গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের মধ্যেই একই চা-বাগান এলাকায় ফের এক শ্রমিককে আক্রমণ করে চিতাবাঘ। যার জেরে মৃত্যু হয় তাঁর। টানা দুই মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল শ্রমিক মহল। বনকর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আরও পড়ুনঃ ফোনেই ৭৫তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা ট্রাম্পের, সংঘাত মেটানোর চেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্টের?
অগস্টের শেষের দিকে নাগরাকাটা ব্লকের উত্তর অংরাভাষা গ্রামে ফের চিতাবাঘের হামলায় প্রাণ হারায় আর এক কিশোর। ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রের মৃত্যুর পর এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে শুলকাপাড়া অঞ্চলেও একইভাবে বৃদ্ধসহ কয়েকজনের উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
মাত্র দু’মাসের মধ্যে তিনটি মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চা বাগান ও জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে প্রতিদিনই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা। বন দফতর খাঁচা পাতা ও ক্যামেরা বসানোর মতো উদ্যোগ নিলেও তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ডুয়ার্সবাসীর একটাই প্রশ্ন, আর কত প্রাণ গেলে নড়বে প্রশাসন?