সৌমেন দত্ত, কোচবিহার:
ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের জায়গা দখল করে মিনি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির অভিযোগ উঠেছে কোচবিহার পুরসভার বিরুদ্ধে। শহরের বুকে প্রায় দেড় একর জায়গায় তৈরি করা হয়েছে ওই ডাম্পিং গ্রাউন্ড। অথচ ওই জমির মালিক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের কাছ থেকে কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি। বিস্ফোরক এই তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই বেকায়দায় পড়ে গিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ। শীঘ্রই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে পুরসভাকে চিঠি করা হবে বলে আধিকারিকরা জানিয়েছেন। যদিও পুরসভার দাবি, তারা সেখানে মিনি ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করেনি। ওখানে কারা আবর্জনা ফেলছে তা জানেন না বলে দাবি করেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
রাজবাড়ির পিছনে লিচুতলার মাঠে কয়েকমাস ধরেই পুরসভার তরফে আবর্জনা জমানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। ভূমি সংস্কার দপ্তরের দাবি, পুরসভার তরফেই সেখানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দপ্তরের আধিকারিক হিমাদ্রি সরকার বলেন, ‘পুরসভা ওখানে আবর্জনা ফেলছে। আমাদের কাছ থেকে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। এবিষয়ে পুরসভাকে শীঘ্রই চিঠি করা হবে।’
আরও পড়ুন: চৈত্র কৃষ্ণা দ্বাদশীতে ধনিষ্ঠা নক্ষত্র, ব্যবসায় বাজিমাত এই তিন রাশির
পুরসভা অবশ্য পালটা দাবি করেছে সেখানে কোনও ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়নি। পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, ‘গ্যারাজ তৈরি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আমরা জায়গাটি চেয়েছি। কিন্তু সেখানে আবর্জনা জমিয়ে কারা ডাম্পিং গ্রাউন্ড করেছে জানি না।’
রাজবাড়ির পিছন দিকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিশাল মাঠ রয়েছে। সেখানেই দেখা গেল আবর্জনার স্তূপ। পিছনের দিক থেকে যাঁরা রাজবাড়ি দর্শন করছেন তাঁদের কাছে বিষয়টি ‘প্রদীপের নীচে অন্ধকারের’ মতোই। রাস্তার একপাশে যখন রাজবাড়ির সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে আরেকপাশেই ডাম্পিং গ্রাউন্ড। সেখানে কারা আবর্জনা ফেলছে পুরসভা কিছু জানে না বলে দাবি করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, পুরসভার গাড়ি এসে এখানে আবর্জনা ফেলছে। সোমবার দুপুরের দিকে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার কথায়, ‘একসময় এটি নীচু জায়গা ছিল। প্রথমদিকে দেখলাম মাটি দিয়ে ভরাট করা হল। এখন তো আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।’ এলাকার বাসিন্দা তথা বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক িবরাজ বসু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পুরসভা ওখানে আবর্জনা ফেলছে। রাজবাড়ির পিছনের দিকে ছোট গেট রয়েছে। যে পর্যটকরা এদিকে আসেন তাঁরা আবর্জনা দেখে যান। এটা ভালো নয়। পুরসভার এসব তুঘলকি কাজকর্ম বন্ধ হওয়া উচিত।’
আরও পড়ুন: নির্বাচন ঘোষণা বাংলাদেশে, ছাত্রদের দাবি নস্যাৎ
এলাকায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি হয়ে গেলেও স্থানীয় কাউন্সিলার অভিজিৎ মজুমদার নাকি কিছুই জানেন না সেখানে কারা আবর্জনা ফেলছে! তবে অভিজিৎ স্বীকার করেছেন সেখানে তাঁর উদ্যোগে মাটি ফেলা হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘ওটা নীচু জায়গা ছিল। তাই খেলাধুলোর সুবিধার জন্য মাটি ফেলে উঁচু করেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে কে বা কারা আবর্জনা ফেলছে তা জানি না।’
শহর সংলগ্ন বকুলতলা এলাকায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড রয়েছে। শহরের আবর্জনা সংগ্রহ করে সেখানেই ফেলা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে শহরের বুকে রাজবাড়ির মতো ঐতিহ্যশালী পর্যটনস্থলের পিছনে ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরির প্রয়োজনীয়তা পড়ল কেন সেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।