“বেকারত্বের বেকার সময়”
– সৌমেন মুখোপাধ্যায়
দূরপাল্লার ট্রেনটা তার সিগনাল দিয়ে তার গতি নিয়ে এগোতে থাকে। ট্রেনের যাত্রীরা দীর্ঘ প্রতিজ্ঞার পর এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। পিঠে ঝুলানো ব্যাগ থেকে একটা খাম বার করে যতীন মহন্ত শেষ বারের মতো দেখে আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়।
“কোথায় যাবেন?” এক যাত্রী যতীনকে প্রশ্ন করে।
“এই হাজারীবাগ।” যতীন উত্তর দেয়।
“নতুন পোস্টিং বুঝি?”
“হাঁ।” সংক্ষিপ্ত উত্তর দিলেও মনে মনে যতীন বলে, ‘নতুন কেন ছাই। হাজার রকম কাজ করার পর একটা নতুন জায়গাতে এলাম, তাও আবার কয়দিনের জন্য কে জানে।”
‘কত বেতন?” এবার যাত্রীর কথা শুনে যতীন কিছু না বলে একটা খবরের কাগজ মন দিয়ে পড়তে শুরু করে।
ট্রেন তার নিজস্ব গতি কমিয়ে স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ায়। যতীন ট্রেন থেকে নিজের ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়ে। একটা অটো করে গন্তব্যস্থলে ঠিক সময়ে পৌঁছায়। “অল ইন্ডিয়া মাল্টি কমপ্লেক্স, হাজারীবাগ ” । বসের অফিসের সামনে বড়ো হল ঘরে ইনটারভিউ-এর জন্য বেকার কম বয়স থেকে বয়সের শেষ সীমা অবধি সবাই বসে আছে।
গেট কীপার এক এক জনের নাম ধরে ডাকছে আর এক একজন ভিতরে যাচ্ছে । কিন্ত, রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর তাদের মুখের অবস্থা দেখে বাকিদের অবস্থা আরও গম্ভীর হয়ে যায়।
‘যতীন মহন্ত ‘
‘আছি’, এই বলে যতীন ইনটারভিউ রুমে গিয়ে হাজির হয়।
“স্যার, ভিতরে আসতে পারি?” যতীন ভদ্রতার সুরে বলে।
“ইয়েস, বসুন। ” এক ব্যক্তি বলেন।
“ফাঁকা চেয়ারে বসে যতীন বলে, “ধন্যবাদ।”
“আপনার সিভি দেখে বুঝলাম আপনার নলেজ অনেক। অভিজ্ঞতাও বেশ ভালো। আচ্ছা, আপনি কি সিওর যে, আমাদের এই অল ইন্ডিয়া ধরে যে মাল্টি পার্পোস কাজগুলো হয় তার জন্য আপনি পারফেক্ট?”
যতীন শেষবারের মতো মনবল শক্ত করে বলে, “আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস এবং কাজের দক্ষতার সাথে বলতে পারি যে, আমিই পারফেক্ট। ”
“আর যদি এই চাকরীটা অন্য কারুকে দেওয়া হয় তাহলে আপনার কোন আপত্তি নেই তো?” তিনজন ইন্টারভিউ বোর্ডের মধ্যে অন্য একজন বলেন।
“না, তাতেও আমার কোন আপত্তি নেই। তখন আরো বেশী খুশী হবো যে, একজন বেকার তার বেকারত্বের জ্বালা থেকে মুক্তি পেয়েছে।”
“ওকে। আপনি এখন আসতে পারেন। পরে আপনাকে চিঠি করে জানানো হবে।”
“ধন্যবাদ “, বলে যতীন ইন্টারভিউ রুম থেকে বেরিয়ে নিজের গন্তব্যস্থলের দিকে রওনা দেয়, এবার তার ট্রেন ধরার পালা।