Wednesday, 30 April, 2025
30 April, 2025
HomeদেশPahalgam Terror attack: খুলনা-যশোহরে বসে সন্দেহজনক কথাবার্তা! গভীর রাতে রহস্যজনক রেডিয়ো সঙ্কেত

Pahalgam Terror attack: খুলনা-যশোহরে বসে সন্দেহজনক কথাবার্তা! গভীর রাতে রহস্যজনক রেডিয়ো সঙ্কেত

বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে চোরাপথে ভারতীয় হ্যাম রেডিয়োর পরিকাঠামো ব্যবহার করে গভীর রাতে কিছু রহস্যজনক কথাবার্তা চলছিল।

পহেলগাঁও হামলার ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার। কিন্তু তার আগেই ভারতের পূর্ব সীমান্তে হ্যাম রেডিয়োর তরঙ্গে ধরা পড়া রহস্যজনক কণ্ঠ, সাংকেতিক বার্তালাপ এবং উর্দু আলাপচারিতা সংশয় তৈরি করেছিল। বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে চোরাপথে ভারতীয় হ্যাম রেডিয়োর পরিকাঠামো ব্যবহার করে গভীর রাতে কিছু রহস্যজনক কথাবার্তা চলছিল। খবর পেয়ে সক্রিয় হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। দক্ষিণবঙ্গে আপাতত অকেজো করে দেওয়া হয়েছে হ্যাম নেটওয়ার্কের ‘রিপিটার’।

আরও পড়ুন: প্রত্যাঘাত চাইছে দেশবাসী, জরুরি বৈঠক; থাকতে পারেন ডোভালও

রেডিয়োর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন এবং কথোপকথন সম্ভব। দুর্যোগ বা বড় দুর্ঘটনায় যোগাযোগের সব মাধ্যম ভেঙে পড়লে হ্যাম রেডিয়ো সহায়। কিন্তু বিপদে ‘পরিত্রাতা’ যে নেটওয়ার্ক, তাকে কাজে লাগিয়ে বিপদ ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে আশঙ্কার কথা দিল্লিকে জানানো হয়েছে।

রহস্যজনক বার্তার আদানপ্রদান গত জানুয়ারিতে প্রথম টের পান হ্যাম রেডিয়ো চালক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘আমি রাতে রেডিয়ো বন্ধ রাখি না। আওয়াজটা কমিয়ে রাখি। এক দিন মাঝরাতে ঘুম ভেঙে শুনলাম, রেডিয়ো থেকে কথোপকথনের আওয়াজ আসছে। ভেবেছিলাম, কেউ কোনও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ বাড়িয়ে উত্তর দিই।’’ অম্বরীশ বলেন, ‘কিউআরজ়েড, কিউআরজ়েড’। যার অর্থ, কে বলছেন? এটি হ্যাম যোগাযোগের ভাষা। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। অম্বরীশের বক্তব্য, তখনকার মতো সব থেমে গেলেও কিছুক্ষণ পরে আবার ওই কথোপকথনের আওয়াজ হয়। ফের অম্বরীশ কথা বলেন। নিজের ‘কল সাইন’ উল্লেখ করে পরিচয় দেন। সাধারণ ভাষাতেও কথা বলেন। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। ওই রহস্যজনক ঘটনার কথা ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের অন্য সদস্যদেরও অম্বরীশ জানান। তাঁদেরও অনুরোধ করেন রাতে রেডিয়ো ‘অন’ রেখে বিষয়টি নজরে রাখতে। তাঁরাও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার পরে হ্যাম রেডিয়ো চালকেরা নড়েচড়ে বসেন।

আরও পড়ুন: পহেলগামের পরে কাশ্মীর ছেড়ে পালানোর হিড়িক, বিমান বাড়াতে বলল ডিজিসিএ

এই কথোপকথনের রেডিয়ো সংকেত কোন দিক থেকে আসছে, তা নির্ধারণ করার জন্য ‘দিক নির্ণায়ক অ্যান্টেনা’ (ডায়রেকশনাল অ্যান্টেনা) ব্যবহার করেন অম্বরীশরা। ওই কথোপকথনে বাংলাদেশি টান ছিল বলে ভারতের পূর্ব সীমান্ত থেকেই খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। ওই দিক থেকেই রেডিয়ো সঙ্কেত আসছে বলে দিকনির্দেশক অ্যান্টেনায় ধরা পড়ে। তার পরে রেডিয়োর শক্তি ধাপে ধাপে কমিয়ে তাঁরা পরীক্ষা করেন যে, কতক্ষণ পর্যন্ত ওই কথোপকথন ধরা পড়ছে। তাতে দেখা যায়, কলকাতা বা তার উপকণ্ঠে বসে বনগাঁ বা বসিরহাট পর্যন্ত কথা বলার মতো শক্তিতে যখন রেডিয়োকে কাজ করানো হচ্ছে, তখন ওই কথোপকথন ধরা পড়ছে না। কিন্তু শক্তি বাড়িয়ে যোগাযোগের পরিধি সীমান্তের ও পার পর্যন্ত প্রসারিত করলে ওই কথোপকথন ধরা পড়ে যাচ্ছে।

তা থেকেই হ্যাম চালকেরা নিশ্চিত হন যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বসে কিছু লোক এ সব কথোপকথন চালাচ্ছে। ওই রহস্যময় রেডিয়ো সংকেতের উৎসস্থল খুলনা এবং যশোহর বলেও তাঁরা চিহ্নিত করে ফেলেন। স্ক্যানার ব্যবহার করে অম্বরীশ আবিষ্কার করেন, রহস্যজনক কথোপাকথন যখন শোনা যাচ্ছে না, তখন আসলে কথোপকথন চলছে। অম্বরীশের কথায়, ‘‘ওই কথোপকথনের আওয়াজ পেয়ে যখনই আমরা সাড়া দিতাম, তখনই ওরা রেডিয়ো সঙ্কেতের তরঙ্গ বদলে ফেলত। অন্য তরঙ্গে গিয়ে কথা বলত। বাংলার বদলে উর্দুতে কথা বলতে শুরু করত।’’

বিষয়টিতে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের হ্যাম রেডিয়ো ক্লাবের শীর্ষকর্তা অনুপ ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন পশ্চিমবঙ্গের হ্যাম চালকরা। অনুপের ক্লাবের সদস্যদের নজরদারিতে ওই কথোপকথন ধরা পড়ে। পশ্চিমবঙ্গের ‘রিপিটার’ ব্যবস্থা ব্যবহার করে বাংলাদেশে বসে কারা কথোপকথন চালাচ্ছে, তা বাংলাদেশের হ্যামরা চিহ্নিতও করে ফেলেন বলে অম্বরীশদের দাবি। কিন্তু তাঁরা ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবকে সে সব নাম জানাননি। অম্বরীশের দাবি, নাম জানালে তাঁরা বিপদে পড়তে পারেন বলে বাংলাদেশের রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের জানিয়েছিলেন।

পুরো ঘটনাপ্রবাহের বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে অবহিত করা হয়। মন্ত্রকের তরফে অম্বরীশ-সহ ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের অন্য সদস্যদের বলা হয় রহস্যজনক কথোপকথনের উপরে নজর রাখতে। জানুয়ারির মাঝামাঝি ছিল গঙ্গাসাগর মেলা। প্রতি বছর গঙ্গাসাগরে হ্যাম রেডিয়ো ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়। অম্বরীশের মতো ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবে নথিভুক্ত হ্যামরাই সেখানে যান। তাঁর কথায়, ‘‘সাগরমেলায় খুব শক্তিশালী সিগন্যালিং ব্যবস্থা থাকার সুবাদে মেলার সময়ে আমরা বাংলাদেশ থেকে ভেসে আসা ওই কথোপকথন আরও স্পষ্ট শুনতে পাই। বাড়িতে বসে পুরো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু গঙ্গাসাগরে সিগন্যাল অনেক শক্তিশালী। আর লবণাক্ত জলের উপর দিয়ে রেডিয়ো সঙ্কেত খুব ভাল ভাবে যাতায়াত করে। তাই ওখানে বসে আমরা বাংলাদেশের ওই রহস্যজনক কথোপকথন স্পষ্ট শুনতে পাই।’’

অম্বরীশ জানাচ্ছেন, সাঙ্কেতিক ওই কথোপকথনে কাউকে কোথাও পাঠানো বা কোনও জিনিস কারও মাধ্যমে অন্য কোথাও পাঠানোর কথা বলা হচ্ছিল। কে, কবে, কোথা থেকে সেই জিনিস সংগ্রহ করবে, সেই নির্দেশও দেওয়া হচ্ছিল। আলু, পেঁয়াজ বা অন্য কোনও সব্জির নাম ব্যবহার করা হচ্ছিল নির্দিষ্ট সময় বোঝাতে। গঙ্গাসাগরে বসেই সেই কথোপকথন রেকর্ড করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানো হয়। এর পরে মন্ত্রকের দল অম্বরীশের বাড়িতে আসে বিশদে তথ্য সংগ্রহ করতে। ওই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তদন্তও শুরু করেছে বলে সূত্রের দাবি। তবে মন্ত্রকের তরফ থেকে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা হয়নি। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সদস্যরা আপাতত ‘রিপিটার’ বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ঘুরে যাওয়ার পরে মার্চ মাসেও বাংলাদেশে বসে ভারতীয় ‘রিপিটার’ ব্যবহার করে রহস্যজনক বার্তার আদানপ্রদান চালানো হচ্ছিল। এখন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে হ্যামরা ‘পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট’ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করছেন।

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন