২০১৪ সালে প্রথমবারের জন্য ক্ষমতায় আসে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ক্ষমতায় এসেই প্রথম যে কাজ করে তা হল ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পথে চলা শুরু। গত এগারো বছরে ভারতে যে একটা ডিজিটাল বিপ্লব ঘটে গিয়েছে এমনটা বললে তা একটুও বাড়াবাড়ি হবে না। বরং জনপরিষেবার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেছে দেশ। কেবল শহর নয় ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ভাগীদার আজ ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামও। এই ১১ বছরে কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে ভারত?
ডিজিটাল লেনদেনের চেহারা বদলে দেওয়া ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) এখন সারা দেশে দৈনন্দিন লেনদেনের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের মার্চ মাসেই, UPI-এর মাধ্যমে ২৪.৭৭ লক্ষ কোটি টাকার বা ১৮,৩০১ মিলিয়ন লেনদেন করা হয়েছে। ৪৬ কোটিরও বেশি মানুষ এবং ৬৫ মিলিয়ন ব্যবসায়ী UPI ব্যবহার করছেন। ACI ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী রিয়েল-টাইম পেমেন্টের ৪৯% ভারতে হয়েছিল।
আধার ডিজিটাল পরিচয়ের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য ভিত্তি তৈরি করে ই-কেওয়াইসি এবং পরিষেবা সরবরাহকে সহজ করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪১.৮৮ কোটি আধার কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) সিস্টেম সরাসরি ৪৩.৯৫ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সুবিধাভোগীদের কাছে স্থানান্তর করেছে। এর ফলে ৫.৮৭ কোটি জাল রেশন কার্ড এবং ৪.২৩ কোটি ডুপ্লিকেট গ্যাস সংযোগ অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে।
৫জি প্রযুক্তির আবির্ভাব এবং ৪.৭৪ লক্ষ বিটিএস টাওয়ার স্থাপনের ফলে ভারত বিশ্বের দ্রুততম ৫জি প্রযুক্তি সম্প্রসারণকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভারতনেট প্রকল্পের মাধ্যমে ২.১৪ লক্ষেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতকে উচ্চ-গতির ইন্টারনেটের সাহায্যে সংযুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে গ্রামেও ডিজিটাল পরিষেবা সহজলভ্য হয়েছে।
আরও পড়ুন: বকেয়া DA না দিয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার
CoWIN পোর্টাল ২২০ কোটিরও বেশি কোভিড টিকা ট্র্যাক করে ভারতকে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাদান অভিযানে শীর্ষস্থানীয় করে তুলেছে। গ্রামীণ ভারতের ৫.৯৭ লক্ষ কেন্দ্রের মাধ্যমে কমন সার্ভিস সেন্টার (CSC) ব্যাঙ্কিং, বিমা এবং শিক্ষার মতো পরিষেবা প্রদান করছে।
ভাষাগত বাধা যাতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ভেঙে ভাষিণী প্ল্যাটফর্মটি ৩৫টিরও বেশি ভাষায় পরিষেবা প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ ডিজিটাল স্বাক্ষরতা অভিযান (PMGDISHA) ৬.৩৯ কোটি গ্রামবাসীকে ডিজিটাল স্বাক্ষর করে তুলেছে। একই সময়ে, ১.০৭ কোটি সরকারি কর্মচারী ‘কর্মযোগী ভারত’ পোর্টালে ডিজিটাল প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
আরও পড়ুন: বাংলায় কি বামই ভরসা? অথচ ‘চাকরি খাওয়া’র অভিযোগ এনেছিলেন মমতা
ইন্ডিয়াএএআই মিশন, ইন্ডিয়া সেমিকন্ডাক্টর মিশন এবং প্রতিরক্ষা খাতে স্বদেশীকরণের মতো কর্মসূচি প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার দিকে ভারতকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। ২০২৫ সালের মে মাসের মধ্যে, ভারতের জিপিইউ ক্ষমতা ৩৪,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১.৫৫ লক্ষ কোটি টাকার সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা উৎপাদন মূল্য রেকর্ড তৈরি করেছে। যা ১,২৭,৪৩৪ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ২০১৪-১৫ সালে তা ছিল ৪৬,৪২৯ কোটি টাকা। ১৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। এই বৃদ্ধি দেশীয় প্ল্যাটফর্ম যেমন লাইট যুদ্ধ বিমান তেজস, অর্জুন ট্যাঙ্ক, আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, এএলএইচ ধ্রুব হেলিকপ্টার এবং বেশ কয়েকটি দেশীয়ভাবে নির্মিত নৌবাহিনীর জাহাজের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে প্রতিফলিত করে।
