রথ মানেই রঙিন শোভাযাত্রা, মেলা, ভক্তিরসের জোয়ার। আর তার সঙ্গে যেন ছায়ার মতো জুড়ে থাকে গরম গরম জিলিপি আর মুচমুচে ভাজা পাঁপড়ের গন্ধ! কে না জানে, রথের দিনে রথ না টানলেও, রথের মেলায় না গেলেও একটুখানি জিলিপি বা পাঁপড় মুখে না দিলে যেন কিছুই পূর্ণ হয় না।
কিন্তু কবে থেকে এই জিলিপি আর পাঁপড় রথের দিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল?
রথের উৎসব আসলে মাটির খুব কাছের এক উৎসব। মানুষের কাছে রথ মানে শুধুই মূর্তিসজ্জা নয়, তার সঙ্গে থাকে জীবনের স্বাদ। আর সেই জীবনের স্বাদেই এসেছে জিলিপির মিষ্টতা, আর তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঁপড়ও। এই দুটি খাবারই ভারতের প্রাচীন খাদ্যসাংস্কৃতিক ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন: তুলনা টানা হচ্ছে আরজি কর-কাণ্ডের সঙ্গে! বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিল বিভিন্ন বিরোধী সংগঠন
রামায়ণের কাহিনিতেও পাওয়া যায় পাঁপড়ের ইঙ্গিত। ভরদ্বাজ মুনি রাম ও তাঁর অক্ষৌহিণী সেনার জন্য যে আতিথ্যের আয়োজন করেছিলেন, তাতে পাঁপড়ের উল্লেখ রয়েছে বলে দাবি অনেক পণ্ডিতের। পাঁপড় উত্তর ভারতের, বিশেষত পাঞ্জাব ও গুজরাতের বহু প্রাচীন খাবার।
সংস্কৃত পুঁথিতেই জিলিপির উল্লেখ মেলে, তবে মোগল আমলেই এটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মোঘল সম্রাটরা এই রসাল মিষ্টিকে বিশেষ পছন্দ করতেন। বর্ধমানের মহারাজ মহতাবচন্দ্র বাহাদুর একবার ইফতারে মানকচুর জিলিপি বিতরণ করেছিলেন। সেই থেকেই এর লোকপ্রিয়তা গ্রামবাংলার হাটে-মেলায় ছড়িয়ে পড়ে।
রথের দিনেই কেন খাওয়া হয়?
বিশ্বাস অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর ১০৮ ঘড়া জলে স্নান করে জগন্নাথদেব প্রতিবছরই জ্বরে পড়েন। সেই সময়ে তিনি নিভৃতবাসে যান। সেখানেই তাঁকে পাচন খাইয়ে সুস্থ করা হয় এবং মাসির বাড়ি গুন্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে শোরগোল! বেডরুম থেকে উদ্ধার মহিলার কঙ্কাল!
শোনা যায়, সেখানেই মুখের স্বাদ ফেরাতে তিনি নাকি মুখরোচক কিছু খাবার খেয়েছিলেন। তখনই নাকি খেয়েছিলেন পাঁপড় আর জিলিপি। যদিও তাঁর ৫৬ ভোগে এই দুই খাদ্যের কোনও ঠাঁই নেই, তবু রথের মেলায় তারা দিব্যি জায়গা করে নিয়েছে।
রথযাত্রার মেলা অনেক সময়েই হত গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলে, যেখানে দামি মিষ্টি বা নাগরিক খাদ্যসামগ্রী সহজে মিলত না। তার মধ্যেই জিলিপি আর পাঁপড়ের সহজলভ্যতা ও কম দামে জনপ্রিয়তা তাদের এনে দেয় এক স্থায়ী জায়গা।
এমনও দেখা গিয়েছে, যাঁরা রথের দড়ি টানেন না, এমনকি রথ দেখতে যান না, তাঁরাও ঐতিহ্যের খাতিরে একটুখানি জিলিপি কিংবা এক প্যাকেট পাঁপড় কিনে নেন মেলার দোকান থেকে।