কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ) বা পুরনিগম, সমস্যার সমাধান করতে পারেনি কেউ। তাদের কারও ওপর নির্ভর না করে এবার দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা নিকাশিনালা ও রাস্তাগুলোর সংস্কার করবেন বিধান মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই। সেখানকার ব্যবসায়ী সমিতি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কেটজুড়ে থাকা একাধিক রাস্তা ও নিকাশিনালা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন সময় এব্যাপারে কখনও এসজেডিএ, কখনও আবার পুরনিগমের কাছে গেলেও একে অপরের ওপর দায় চাপানোর ঘটনা ঘটেছে। দিনের পর দিন দায় এড়ানোর পর পুরনিগম ও এসজেডিএ-র ওপর কি ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা? সেই ক্ষোভ থেকেই কি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে? ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বাপি সাহার কথায় ক্ষোভ স্পষ্ট। বললেন, ‘আমরা তো দীর্ঘদিন ধরেই রাস্তা–নিকাশিনালা সংস্কারের কথা বলে চলেছি। কোনও কিছুই তো হচ্ছে না। আর এখন সংস্কার করতে গেলে তো টেন্ডারের নাম করে তিন-চার মাস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।’
আরও পড়ুন: দাম কমলো গ্যাস সিলিন্ডারের; আজ থেকেই কার্যকর
ব্যবসায়ী সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাপির বক্তব্য, ‘শুধু রাস্তা কিংবা নিকাশিনালার সমস্যাই নয়, ১৯৬২ সাল থেকেই আমরা ব্যক্তিমালিকানার দাবি করে আসছি। বাস্তবে কোনও উদ্যোগই নেওয়া হল না। মুখ্যমন্ত্রীকে গণস্বাক্ষর সংবলিত দাবিপত্র পাঠানো হলেও কোনও উত্তর পাওয়া গেল না।’
স্থানীয় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার বিজেপির মঞ্জুশ্রী পালের কথায়, ‘পুরনিগমের তরফে হোল্ডিং ট্যাক্স, কনজারভেন্সি ট্যাক্স নেওয়া হলেও রাস্তা-নিকাশিনালা সংস্কারে কোনও উদ্যোগই নেই। আর বিধান মার্কেটের উন্নতির জন্য শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। আমি পুরনিগমের কাছে বিধান মার্কেটের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কোনও পরিবর্তন হল না।’
হঠাৎ এলাকার নিকাশিনালা-রাস্তা সংস্কারের এই উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক কোনও উসকানি রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, ফের বিধান মার্কেটে ক্ষমতায় আসা বাপি গোষ্ঠীর সঙ্গে শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেবের দূরত্ব রয়েছে, বলছে ওয়াকিবহল মহল। তাই কি মেয়রের ওপর চাপ বাড়াতে এই ‘স্বাবলম্বী সিদ্ধান্ত’?
মেয়রের বক্তব্য, ‘ওই জায়গাটা এসজেডিএ-র। বাপিরা আমাকে দেখিয়েই ওই এলাকার রাস্তা-নিকাশিনালার কিছু অংশ সংস্কার করছে। মার্কেটে আরও কিছু জায়গায় রাস্তা ও নিকাশিনালা খারাপ রয়েছে। ওটা আমি সংস্কার করে দেব।’ তাঁর আরও দাবি, ‘ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার একটা প্ল্যান দিয়েছিলেন। আমরা সেইমতো বিধান মার্কেটের উন্নতির জন্য কাজ করেছি।’
আরও পড়ুন: নড্ডার বাড়িতে আমন্ত্রণ! সুকান্তের বদলে কি শমীক!
বিধান মার্কেটজুড়ে বিভিন্ন রাস্তাই দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। বিধান রোড থেকে মার্কেটের মূল প্রবেশপথে হংকং মার্কেটের রাস্তা, মুরগিহাটি থেকে সেবক রোডে যাওয়ার রাস্তা, তুলাপট্টি ও পানগলিতে যাওয়ার রাস্তা- সব বেহাল। সেসব রাস্তায় চলতে গিয়ে চোট-আঘাত লাগছে। বারবার বললেও পুরনিগম ও এসজেডিএ পাশ কাটিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য অসিত দে বলছিলেন, ‘মুরগিহাটির ওই রাস্তায় প্রায়দিনই রিকশা, ভ্যান উলটে যায়। হংকং মার্কেটের রাস্তায় প্রায়দিনই মানুষজন হোঁচট খেয়ে পড়ছে। লোকজন আমাদের ওপর রেগে যাচ্ছে।’
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহ থেকে নিজেরাই রাস্তা-নিকাশিনালা সংস্কারে হাত দিয়েছে বিধান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি। সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলোর পাশাপাশি রবিবার মার্কেটের নিকাশিনালার একাংশও নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে লোক দিয়ে সংস্কার করান ব্যবসায়ীরা।