কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
পাড়ার ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে কিশোরদের মধ্যে গণ্ডগোল। আর সেই গণ্ডগোলে রাজনৈতিক রং লাগায় জল এতদূর গড়াল। দিন-দিন কি অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে শহর শিলিগুড়ি? বুধবার বাগরাকোটের ঘটনার পর থেকে শহরবাসীর মধ্যে এই বিষয়টিই চর্চায় উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: বৈধৃতি যোগের সঙ্গে বিষকুম্ভ যোগ, কৃষ্ণা প্রতিপদ ভাগ্য প্রসন্ন চার রাশির
বুধবারের ঘটনার পর শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলেছে। শিলিগুড়ির বিধায়ক বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র গৌতম দেব। মেয়রের বক্তব্য, ‘যত নির্বাচন আগাবে তত এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে। প্রতিদিন লোক দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল পাকিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সমস্ত মানুষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, এরা থাকবে না, আমরাই থাকব। আমরা আমাদের সম্প্রীতি ভুলব না। আমরা রাজনীতি চাই না, তাই দূর থেকে দেখছি। প্রয়োজনে রাস্তায় নামব।’ মেয়রের জন্যই শহরের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এবং হচ্ছে বলে পালটা দাবি করেছেন বিধায়ক শংকর ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ‘মেয়রের জন্যই শিলিগুড়িতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি যেদিন থেকে দায়িত্ব নিয়েছেন সেদিন থেকেই শহরের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে শুরু করেছে। এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে উনি যদি আইনি ব্যবস্থা নেন তবে নেবেন।’
শিলিগুড়িতে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে বাগরাকোটে এবং ডাঙ্গিপাড়ার কিশোরদের মধ্যে গত ২৯ তারিখ ঝামেলা হয়। সেই ঝামেলা মেটাতে দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পদক্ষেপ করেন। তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীতে মঙ্গলবার বাগরাকোটের তরুণকে তুলে নিয়ে গিয়ে ডাঙ্গিপাড়ায় মারধর করার পর থেকে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার রাতেও বাগরাকোটের বাসিন্দারা শিলিগুড়ি থানা ঘেরাও করেন। সেখানে পৌঁছে যান ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায়। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। বুধবার সকালে আক্রান্তের পরিবারকে নিয়ে থানার সামনে হাজির হয়ে যান বিধায়ক। লোকজন নিয়ে তিনি থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করেন। সেই বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শহর অচল করার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল। এরপর বিক্ষোভকারীদের একাংশ এসে টিকিয়াপাড়ায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: কলা ৬০০ টাকা, দু’টো পরোটা ২১৯৮ টাকা; দামের সঙ্গে ট্যাক্স যোগ! দেখে চক্ষু চড়কগাছ
শহরের একাংশ মনে করছে, সহিষ্ণুতা হারাচ্ছেন শিলিগুড়িবাসী। নয়তো বাচ্চাদের ক্রিকেট খেলায় রাজনৈতিক রংও লাগত না, এত বড় ঘটনাও ঘটত না। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার সুভাষপল্লির বাসিন্দা সুপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘এত বছর এই শহরে রয়েছি, এরকম কখনও দেখিনি। আমার শহরে এই ধরনের রাজনীতি ছিল না। দেখে কষ্ট হয়।’ বাগডোগরার একটি স্কুলের শিক্ষক চৈতালি দাস সরকার মনে করেন, ‘ছোটদের বিষয়ে বড়দেরই নাক গলাতে হয় না। সেখানে রাজনীতির প্রবেশ অবাঞ্ছনীয়। এভাবে শহর সহিষ্ণুতা হারালে আগামী প্রজন্ম কী শিখবে?’