Saturday, 13 September, 2025
13 September
বাংলা কাউন্টডাউন টাইমার
বঙ্গবার্তা
HomeবিনোদনUttam Kumar: "২৪ জুলাই"; শুধু একটি দিন নয়, এক শূন্যতার দিন

Uttam Kumar: “২৪ জুলাই”; শুধু একটি দিন নয়, এক শূন্যতার দিন

জানতে ইচ্ছে করে, উত্তমকুমার কি মানসিক অশান্তির জন্য ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন? নাকি চলে যেতে চেয়েছিলেন রাজার মতো।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

“২৪ জুলাই – শুধু একটি দিন নয়, এক শূন্যতার দিন। আজ মহানায়ক উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবস। যিনি রূপালী পর্দায় শুধুই নায়ক ছিলেন না, ছিলেন আমাদের আবেগের প্রতিচ্ছবি। তাঁর হাসি, চোখের ভাষা, নিঃশব্দ অভিব্যক্তি – সবই আজও বাঙালির হৃদয়ে বেঁচে আছে। আপনিই চিরকাল আমাদের মহানায়ক। আপনাকে ভোলা যায় না। আপনাকে শত কোটি প্রণাম”

অকালে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন উত্তমকুমার। তিনি মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই।

তার অনেক আগেই ১৯৬৭ সালে ‘ছোটি সি মুলাকাত’ ছবিটি যখন মুক্তি পায় সেইবার তিনি প্রথমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেই সময় আমেরিকা ও পৃথিবীর কয়েকটি উন্নত দেশে বাইপাশ সার্জারিসহ বিভিন্ন ধরনের শল্য চিকিৎসার প্রবর্তন হয়েছে।

উত্তমকুমার নিশ্চয়ই বিদেশে গিয়ে এই চিকিৎসা করতে পারতেন। এই বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সুনীল সেন জানিয়েছেন:

১৯৬৭ সালের ১৬ এপ্রিল আমার সামনেই উত্তমবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

সেই সময় একমাত্র আমি ছাড়া বাড়ির কেউ উপস্থিত ছিলেন না। সেই সময় ইনসেনসিভ কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটের কোনো অস্তিত্ব ছিল না কলকাতায়। ১৯৭১ সালে বেলভিউ নার্সিংহোমে কলকাতায় প্রথম আই সি ইউ ওয়ার্ড চালু হয়।

ডাক্তার সেনের মতে, প্রথমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কিছুদিন পরেই সুস্থ হয়ে উঠে উত্তমকুমার আবার পুরোপুরিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন কাজের মধ্যে। তিনি ভাবতেই চাইলেন না, তাঁর কোনো গুরুতর অসুখ হয়েছিল। কারণ কাজ তখন তাঁকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল।

১৭ জুলাই, ১৯৮০ সাল। সেই দিন উত্তমকুমারের মৃত্যুঘণ্টা শুনতে পেয়েছিলেন ডা. সেন। ‘দেশপ্রেমী’ ছবির শুটিং করে কলকাতায় ফিরে মহানায়ক তাঁর ইংরেজির শিক্ষককে দেখাতে নিয়ে আসেন ডা. সুনীল সেনের কাছে। ওঁর ইংরেজির শিক্ষককে দেখার পর উত্তমবাবুকে ক্যাজুয়ালি দেখে চমকে ওঠেন তিনি। তিনি উত্তম কুমারকে বললেন, গ্যালপ হচ্ছে। আপনি এখনই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যান। রাজিও হয়ে গেলেন তিনি। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে মত পাল্টে গেল। জানালেন, পয়লা আগস্টের আগে ভর্তি হতে পারবেন না।

আরও পড়ুনঃ আবারও ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনা, লাইনচ্যুত শালিমার-সম্বলপুর এক্সপ্রেস

পরের দিন উত্তমকুমার ডাক্তার সেনকে বললেন, গৌরীকে দেখে দিন। ওর বুকে ব্যথা করছে। ডাক্তারবাবুর ভাষায় , আমি তো জানি গৌরীর এই ব্যথা হৃদরোগ আক্রান্তের কোনো ব্যাপার নয়। তিনি তখন ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও মন রাখার জন্য গৌরীর ই সি জি করলাম।

তারপর এল সেই ভয়ঙ্কর রাত। ২৩ জুলাই, ৮০ সাল। ডাক্তার সেন বললেন, রাত দু’টোর সময় বংশী (তিনি ছিলেন উত্তমকুমারের ময়রা স্ট্রিটের রান্নার লোক সে আমায় ডেকে নিয়ে গেল। দেখলাম, ম্যাসিভ অ্যাটাক। উত্তমকুমার শুধু বললেন, সুনীলদা, এবারে আর হল না। সেখান থেকে আমি আমার তিনচার জন ছাত্রের সাহায্যে কোনোরকমে বেলভিউ নার্সিংহোমে নিয়ে এলাম রাত পৌনে তিনটের সময়। পরের দিন প্রস্রাবও বন্ধ হয়ে গেল। আমার মাস্টারমশাই অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়কে ডাকলাম মতামত নেওয়ার জন্য।

১৯৭৯ সালে পুজোর আগে আমেরিকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন উত্তমকুমার। তখন বলেছিলাম আমেরিকা যাচ্ছেন, একবার ওখানে দেখিয়ে নেবেন যদি বাইপাস সার্জারি করতে হয়। তার উত্তরে উত্তমকুমার বলেছিলেন, কী বলছেন সুনীলদা, উত্তমকুমারের বুককাটা। আসলে তিনি কোনোদিন ভাবতেই পারতেন না, সার্জারি করে ওঁর সৌন্দর্য নষ্ট হোক। ওঁর শুধু একটাই কথা, সুনীলদা আপনি আমার শুধু ওষুধ দেবেন, আপনার ওষুধ খাব। মরি তো আপনার হাতেই মরব।

‘নিয়তি’ কথাটার প্রতি অসম্ভব বিশ্বাস করতেন উত্তমকুমার। কোনো জ্যোতিষী নাকি তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর আয়ু আছে একাশি বছর পর্যন্ত আর তিনি হলিউডের ছবিতে অভিনয় করবেন। প্রত্যয়ের সঙ্গে উত্তমকুমার ডাক্তার সেনকে বলেছিলেন, ‘মাই লাইফ আপটু এইট্টি ওয়ান’। অসম্ভব মনের জোর ছিল তাঁর। নিজের শরীরের প্রতি লক্ষ রাখতেন না তাও বলা যাবে না। মাঝেমধ্যেই বলতেন, সুনীলদা ভালো ঘুম হচ্ছে না। পরিমিত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতেন ডাক্তার সেন। তার কয়েকদিন পরেই হয়তো তিনি ফোন করে বলতেন, সুনীলদা, খুব পরিশ্রমের কাজ আছে, করব কী? ডাক্তার সেন জানতেন, কাজের ক্ষেত্রে বেশি পরিশ্রম করতে বারণ করলেও তিনি শুনবেন না। হলও তা-ই। ভোরবেলা চারটের সময় ফোন। সুনীলদা বুকে ব্যথা করছে। সরবিট্রেট ট্যাবলেট দেওয়া হল। যথারীতি সকাল দশটার সময় চলে গেলেন স্টুডিওয়।

বলতেন, উত্তম চলে যাবে উত্তমকুমারের মতো। আমি শুয়ে থাকব, বিছানায় পড়ে থাকব। লোকে এসে বলবে, তোর কাজ নেই, কাজ দেব? সুনীলদা এটা হয় না, হতে পারে না। উত্তমকুমার এইভাবেই একদিন চলে যাবে। আপনি আমায় বিছানায় শুইয়ে রাখবেন? অসম্ভব। লাস্ট ডেট অবধি আমি কাজ করব।

আরও পড়ুনঃ ব্যাস! আর রক্ষে নেই’, ধেয়ে আসছে কালো মেঘ; চিনা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলায় নিঃশ্বাস ফেলছে নিম্নচাপ

অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে তাঁর কথা।

২৩ জুলাই শুটিংয়ের পরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় তাঁর প্রিয় মন্টুদিকে বলেছিলেন, সুনীলদা বলেছেন আমার শরীর খারাপ। আমি আর বাঁচব না। প্রশ্ন করেছিলেন ডা. সেনকে, তাঁকে কি আর কিছুদিন বাঁচিয়ে রাখা যেত না? ডাক্তার সেনের অভিমত হল, উত্তমকুমার তাঁর ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন। ‘ওগো বধূ সুন্দরী’ ছবিতে অভিনয় করার সময়েই তাঁর শরীর খারাপ হয়। তা সত্ত্বেও সেদিন রাত্রে একটি পার্টিতে যোগ দিতে যান।

তারপর রাত্রিবেলা ডা. সেন যখন তাঁকে দেখেন তখন সারা শরীর দিয়ে জলের বন্যা বইছে, জ্ঞান ছিল শেষ পর্যন্ত। হাতটা ধরে বারবার বলেছেন, সুনীলদা আমায় ছেড়ে চলে যাবেন না। জানতে ইচ্ছে করে, উত্তমকুমার কি মানসিক অশান্তির জন্য ইচ্ছামৃত্যু বরণ করেছিলেন? নাকি চলে যেতে চেয়েছিলেন রাজার মতো। কিন্তু আমরা আক্ষেপ করে চিরদিনই বলব, সমাজের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে তাঁকে কি বাঁচিয়ে রাখা যেত না আরও কিছু দিন?

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন