সোমবার সকালে শ্রীনগরে সেনার ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহতেরাই পহেলগাঁও কাণ্ডের তিন জঙ্গি! ২৪ ঘণ্টার মাথায় সংসদে এমনটাই নিশ্চিত ভাবে জানিয়ে দিলেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, নিহতদের ডেরা থেকে পহেলগাঁওয়ে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র মিলেছে। তা ছাড়া, নিহতদের পরিচয়পত্রও ইঙ্গিত করছে সে দিকেই।
আরও পড়ুনঃ ফুঁসছে তিস্তা, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক মিলেমিশে একাকার; গতকাল রাত থেকেই বন্ধ যান চলাচল
সোমবার সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চিত করেছেন, পহেলগাঁওয়ে ২৬ জনের মৃত্যুর জন্য দায়ী তিন জঙ্গিই সোমবার সেনার গুলিতে মারা গিয়েছে। শাহ বলেন, “এই সন্ত্রাসবাদীরা পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ‘অপারেশন মহাদেব’-এ আমাদের সেনাবাহিনী তাদের নিকেশ করেছে।” তিন জঙ্গির নামও জানিয়েছেন শাহ। তাঁরা হলেন সুলেমান, আফগান এবং জিবরান। তিন জনই সোমবারের অভিযানে নিহত হয়েছে। শাহ বলেন, ‘‘পারভেজ নামে যে ব্যক্তি এই তিন জনকে খাবার জুগিয়ে সাহায্য করেছিল, তাকে আগেই আটক করা হয়েছিল। কাল ওই জঙ্গিদের দেহ শ্রীনগরে আনার পর তাদের শনাক্ত করেছে পহেলগাঁও কাণ্ডে আটক হওয়া ব্যক্তিরা।”
শাহ আরও জানিয়েছেন, জঙ্গিরা পারভেজের ডেরা থেকে পায়ে হেঁটে বৈসরনে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল একে-৪৭ এবং এমআই-৯ কার্বাইড বন্দুক। নিহত জঙ্গিদের ডেরা থেকে সেই অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে। সেগুলিই পহেলগাঁওয়ে ব্যবহৃত হয়েছিল। তেমনটাই বলছে ফরেন্সিক ব্যালিস্টিক রিপোর্ট। এ ছাড়া, মিলেছে চকোলেটও। সম্ভবত দীর্ঘ দিন আত্মগোপন করে থাকার জন্য শুকনো খাবারের সঙ্গে চকোলেটগুলি নিয়েছিল তারা। শাহ জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়া চকোলেটগুলি পাকিস্তানে তৈরি। তা ছাড়া, জঙ্গিদের ডেরা থেকে তাঁদের ভোটার কার্ড-সহ অন্যান্য পরিচয়পত্রও মিলেছে। তাতে জানা গিয়েছে, নিহত তিন জঙ্গিই পাকিস্তানের বাসিন্দা।
সোমবার জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের দাচিগাম জঙ্গলে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে মৃত্যু হয় তিন জঙ্গির। সেনার এই অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন মহাদেব’। পরে নানা সূত্র মারফত খবর পাওয়া যায়, নিহত জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছে পহেলগাঁও হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তথা লশকর-এ-ত্যায়বার জঙ্গি সুলেমান ওরফে হাসিম মুসা। যদিও তখনও সেনার তরফে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। কাশ্মীর জ়োনের আইজিপি বিধিকুমার বিরদিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনিও জানান, দেহ শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। সময় এলে সব জানানো হবে।
আরও পড়ুনঃ শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়ে বাস দুর্ঘটনা; রাতের অন্ধকারে গোঙানি, রক্তবন্যা…
এর পর দাচিগামের জঙ্গলে শুরু হয় চিরুনি তল্লাশি। উদ্ধার হয় একাধিক অস্ত্রশস্ত্র। সম্প্রতি এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হয়েছে দু’জন সন্দেহভাজন। তাদের নিহতদের দেহও দেখানো হয়। শাহের দাবি, দেহ দেখেই নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেছে ধৃতেরা।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহামলায় প্রাণ গিয়েছিল ২৬ জনের। তাঁদের মধ্যে প্রায় সকলেই ছিলেন পর্যটক। সেই ঘটনার পর তিন মাস কেটে গেলেও জঙ্গিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়েও জনসমক্ষে বিশদ জানানো হয়নি। জঙ্গিদের এখনও ধরা সম্ভব হচ্ছে না কেন, গত কয়েক মাসে বিরোধীরা বার বারই সেই প্রশ্ন তুলেছেন। সেই আবহে এ বার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন, ‘অপারেশন মহাদেব’-এ নিহত তিন জঙ্গি পহেলগাঁওকাণ্ডেরই।