কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ট্রেড লাইসেন্স বিভাগে ঘুঘুর বাসা। দপ্তরে দালালরাজের রমরমায় লাগাম পরানো কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না। স্বচ্ছতা আনতে গোটা প্রক্রিয়া অনলাইন মাধ্যমে করা হয়েছিল। অথচ পরিস্থিতি এখনও সেই তিমিরে পড়ে। শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহের পর তা ব্যবহার করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং বেআইনি লেনদেনের ঘটনা ফের একবার প্রশ্নের মুখে ফেলেছে পুর কর্তৃপক্ষকে।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুজো এখন হেরিটেজ; বিনামূল্যে দুর্গা পূজা দেখার বড় সুযোগ
অনলাইনে অনায়াসেই ট্রেড লাইসেন্স মিলে যাওয়া জালিয়াতির পথ খুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। তাই অবিলম্বে ট্রেড লাইসেন্স তৈরির ওয়েবসাইটটির প্রযুক্তিগত মানোন্নয়নের দাবি তুলছেন বিরোধীরা। অনুমতি পেতে দাখিল করা নথিপত্র যাচাই করতে আলাদাভাবে বিশেষ দল গঠনেরও প্রয়োজন রয়েছে বলে মত তাঁদের। এপ্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা অমিত জৈনের বক্তব্য, ‘ট্রেড লাইসেন্স বিভাগকে তো সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। অথচ দপ্তরটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে।’ শিলিগুড়ির ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকারের সাফাই, ‘সবকিছু অনলাইনে হচ্ছে। দালালরাজ রুখতে অনলাইন মাধ্যম করা হয়েছে এক্ষেত্রে। পরিস্থিতির ওপর পুরনিগম নজর রাখছে।’
একসময় দালালের সাহায্যে সহজে পুরনিগম থেকে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যেত। যদিও আবেদনের সময় জমা দিতে হত সমস্ত বৈধ নথিপত্র। হোল্ডিং নম্বর, আধার এবং প্যান কার্ড জমা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এরপর প্রক্রিয়াটি অনলাইনে শুরু হতেই জালিয়াতির পন্থা বদলে গিয়েছে। এখন যে কোনও সাইবার ক্যাফে কিংবা মোবাইল থেকে আবেদন করে ট্রেড লাইসেন্স বের করা যায়। আধার, প্যান ও হোল্ডিং নম্বর স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়। এখানেই রয়েছে প্রযুক্তিগত সমস্যা। অভিযোগ, অ্যাটাচমেন্টে যদি কেউ সাদা কাগজে নিজের নাম লিখে আপলোড করে দেন বা কেউ যদি আধার কার্ডের বদলে ড্রাইভিং লাইসেন্স আপলোড করেন, তবুও ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করে দেয় ওয়েবসাইটটি। তথ্য যাচাইয়ের কোনও বালাই নেই সেখানে।
আরও পড়ুনঃ ‘হাতি-ড্রাগনের’ নাচ দেখবে বিশ্ব! শুল্ক আরোপের মধ্যেই ভারত-চিন বৈঠক
এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবাধে ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করছে দুষ্কৃতীরা। যার বড় প্রমাণ পানিঘাটার ঘটনা। পানিঘাটার ৭৩ জন বাসিন্দার নাম ও তথ্য ব্যবহার করে অনলাইনে শিলিগুড়ি পুরনিগম থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা হয়েছে। সেই ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে একটি ব্যাংকের পানিঘাটা ফাঁড়ি এলাকার ব্রাঞ্চে খোলা হয়েছে অ্যাকাউন্ট। প্রায় পাঁচ কোটি কালো টাকার লেনদেন হয়েছে সেটার মাধ্যমে। প্রশ্ন উঠছে, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার পর কেন যাচাই করা হচ্ছে না? আগে পুরনিগমের কর্মীরা কাজটি করতেন। এখন কেন সেই প্রক্রিয়া বন্ধ?
অভিযোগ, এক এলাকার হোল্ডিং নম্বর দিয়ে অন্য এলাকারও ট্রেড লাইসেন্স মিলছে। কেউ যদি কলেজপাড়ার হোল্ডিং নম্বর দেন, তবে তিনি চম্পাসারির জন্যও ট্রেড লাইসেন্স পেতে পারেন। পুরনিগমের সিপিএমের পরিষদীয় দলনেতা তথা কাউন্সিলার মুন্সি নুরুল ইসলামের কটাক্ষ, ‘পুরনিগম হযবরল-র মতো চলছে। এখন ট্রেড লাইসেন্সের নামে দুর্নীতি চলছে।’ এমন আরও অনেক কেলেঙ্কারি সামনে আসবে বলে দাবি তাঁর।