পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবে সায় দিল মন্ত্রীগোষ্ঠী (গ্রুপ অফ মিনিস্টারস বা জিওএম)। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এখন থেকে চারের পরিবর্তে শুধু দু’টি হারে জিএসটি নেওয়া হবে— পাঁচ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ। ১২ এবং ২৮ শতাংশের জিএসটি হার তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে পৃথক বন্দোবস্ত করা হচ্ছে ক্ষতিকর এবং অতিবিলাসী পণ্যের জন্য। সেই তালিকায় থাকতে পারে মদ, সিগারেট, বিলাসবহুল গাড়ি প্রভৃতি। এই সমস্ত পণ্যে সরকার সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ কর নেবে বলে ঠিক করেছে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে ছয় সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক ছিল। তাতে জিএসটি সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীতে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও। জিএসটি সংস্কারের এই প্রস্তাব এর পর জিএসটি কাউন্সিলে যাবে। আগামী সেপ্টেম্বরে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ ব্যাপক উত্তেজনা বাঁকুড়ায়! DM অফিস অভিযানে তুলকালাম, আটক ৮ ABVP কর্মী
গত ১৫ অগস্ট লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণেই জিএসটি সংস্কারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীপাবলির আগেই নতুন জিএসটি ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে বলে জানান তিনি। সেই অনুযায়ী সরকার তৎপর। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জিএসটি হার চার থেকে দুই-তে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেয় কেন্দ্র। বর্তমানে ৫, ১২, ১৮ এবং ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি প্রচলিত রয়েছে। কোনও কোনও পণ্যে জিএসটি শূন্য। কেন্দ্রের প্রস্তাব, এ বার থেকে জিএসটি হবে শুধু পাঁচ এবং ১৮।
তবে কিছু পণ্যে বিশেষ ৪০ শতাংশ কর চাপানো হবে। সূত্রের খবর, সেই ক্ষতিকর এবং অতিবিলাসী পণ্যের তালিকায় থাকবে মদ, সিগারেট, বিলাসবহুল গাড়ি। এ ছাড়া, বিভিন্ন মাদক দ্রব্য, ঠান্ডা পানীয়, ফাস্ট ফুড, কফি, চিনি, এমনকি পর্নোগ্রাফিকেও সর্বোচ্চ করের তালিকায় ফেলা হতে পারে। এগুলিকে ‘সিন ট্যাক্স’ বলা হচ্ছে। যে সমস্ত পণ্যের বিক্রি বা ব্যবহার সরকার কমাতে চায়, সাধারণ মানুষকে নিরুৎসাহ করার জন্য তার উপর এই বিশেষ কর চাপানো হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ ‘বিধানচন্দ্র রায় বাংলার রূপকার, আর নবরূপকারের নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়’ বললেন মলয়
বৃহস্পতিবারের ছয় সদস্যের মন্ত্রিগোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধরি। এ ছাড়া গোষ্ঠীতে ছিলেন বাংলা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক এবং কেরলের প্রতিনিধি। বৈঠক শেষে সম্রাট বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা সেগুলিতে সায় দিয়েছি। তবে সকলে নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছেন। কোনও কোনও রাজ্য বাড়তি কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। সেগুলি নিয়ে জিএসটি কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে। ১২ এবং ২৮ শতাংশের জিএসটি হার বাতিলের প্রস্তাবে আমরা সায় দিয়েছি।’’
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি চন্দ্রিমা জানান, জিএসটি সংস্কারের ফলে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় কতটা কমবে, কতটা রাজস্ব ক্ষতি হবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রের প্রস্তাবে কিছু বলা হয়নি। বিষয়টিতে আলোকপাত করতে চেয়েছেন চন্দ্রিমা। রাজস্ব ক্ষতি কমানোর জন্য ক্ষতিকর পণ্যে ৪০ শতাংশের পরেও বাড়তি কিছু করের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এখনও সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ছাড়া, জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটি পুরোপুরি প্রত্যাহারের যে প্রস্তাব কেন্দ্র দিয়েছে, তা নিয়েও বক্তব্য জানিয়েছেন চন্দ্রিমা। জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমা থেকে কর প্রত্যাহারের পর যাতে বিমা সংস্থাগুলি সাধারণ মানুষকে বোকা বানাতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে বলেছেন তিনি। চন্দ্রিমার বক্তব্য, শুধু জিএসটি প্রত্যাহার করলেই হবে না। জিএসটি প্রত্যাহারের পরে বিমা সংস্থাগুলি যাতে গ্রাহকদের উপর প্রিমিয়াম বৃদ্ধি করতে না পারে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে জীবন বিমা এবং স্বাস্থ্যবিমায় ১৮ শতাংশ জিএসটি নেওয়া হয়।