একজন সরকারি কর্মী 50 ঘণ্টা জেলে থাকলে, তাঁর চাকরি চলে যায় ৷ তিনি একজন পিওন, ড্রাইভার বা কেরানি- তিনি যেই হোন না কেন ৷ এদিকে একজন মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী এমনকী প্রধানমন্ত্রী জেলে থেকেও সরকার চালাতে পারেন ? মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বা কোনও মন্ত্রীর অপসারণ নিয়ে বিরোধী শিবিরকে কড়া আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷
শুক্রবার বিহারের গয়ায় জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী অপসারণ বিল থেকে শুরু করে আরও একাধিক ইস্যুতে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলিকে তুলোধনা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ গত 20 অগস্ট বিতর্কের মধ্যে লোকসভায় তিনটি সংশোধনী বিল- সংবিধান সংশোধন বিল (একশো ত্রিশতম সংশোধন) 2025, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধন) বিল 2025, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরকার (সংশোধন) বিল 2025 পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷ এই বিলগুলিকে সংবিধান বিরোধী বলে দাগিয়েছেন বিরোধী সাংসদরা ৷
এই বিলগুলির একটিই উদ্দেশ্য- গুরুতর ফৌজদারি মামলায় কোনও মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে গ্রেফতার বা আটক করে 30 দিন জেলে রাখা হলে 31 তম দিনে তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা যাবে ৷ এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে তুমুল হইচই বাধে লোকসভায় ৷ তারই মধ্যে তিনটি বলি পেশ করে সেগুলি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব পাশ করেন শাহ ৷
আরও পড়ুনঃ বাংলায় মহা-ইভেন্ট; মোদীর মুখে কলকাতার ওলিগলির ঐতিহ্য
এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আরজেডি, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলি এই আইনের বিরোধিতা করছে ৷ ওরা ক্ষুব্ধ ৷ কেউ জানে না, কেন ভয় পাচ্ছে ? ওদের মনে হচ্ছে, ওরা জেলে যাবে ৷ আর সব স্বপ্ন ছারখার হয়ে যাবে ৷ এই আইন জনস্বার্থে ৷”
তিনি দাবি করেন তাঁর 11 বছরের সরকারে দুর্নীতির কোনও কালো দাগ নেই ৷ সাধারণ সরকারি কর্মচারীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একজন সরকারি কর্মচারী 50 ঘণ্টা জেলে বন্দি থাকলে তাঁর চাকরি চলে যায় ৷ তিনি গাড়িচালক, কেরানি বা পিওন- যেই হোন ৷ কিন্তু একজন মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীও জেলে থেকে সরকার চালাতে পারে ৷ কয়েক দিন আগে আমরা দেখেছি, কীভাবে জেলে থেকে ফাইলে স্বাক্ষর করা হয়েছে এবং কারাগারে থেকে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ৷ নেতাদের যদি এরকম ভাবভঙ্গি থাকে, তাহলে আমরা দুর্নীতির মোকাবিলা করব কী করে ? এনডিএ সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন এনেছে ৷ প্রধানমন্ত্রীও এই আইনের আওতায় ৷”
প্রধানমন্ত্রী মোদি তাঁর শাসনকালের সঙ্গে পূর্বতন কংগ্রেস জমানার তুলনা টানেন ৷ সেই সময়ে অনেক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে বলে উল্লেখ করেন ৷ আরজেডি-র বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আরজেডি-র দুর্নীতির কথা রাস্তার লোকজনেরও অজানা নয় ৷”
তাঁর বক্তব্য, “তাই আমরা একটি নয়া আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি ৷ যেখানে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী এমনকী প্রধানমন্ত্রীকেও তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে ৷ একজন নিচুতলার কেরানি সামান্য সময় জেলে থাকলে তাঁকে সাসপেন্ড করতে হয় ৷ কিন্তু আমরা এই কঠোর আইন আনার প্রস্তুতি নিতেই আরজেডি, কংগ্রেস আর বাম দলগুলি ক্ষেপে উঠেছে ৷ কারণ, ওরা ওদের নিজেদের পাপের শাস্তি পাবে বলে ভয় পাচ্ছে ৷”
বিরোধী শিবিরকে দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ করে মোদি বলেন, “কংগ্রেস ও আরজেডি ক্ষমতায় থাকাকালীন তাদের কাছে জনগণের টাকা থাকত ৷ তাই তারা কোনও প্রজেক্ট শেষ করতে পারত না ৷ অনেক সময় লাগত ৷ উল্টো দিকে আমি আজ যে সেতু উদ্বোধন করছি, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম কয়েক বছর আগেই ৷”
অনুপ্রবেশের সমস্যা নিয়ে মোদির বক্তব্য, “আমাদের দেশ আরও একটা বিপদের মুখোমুখি, সেটা অনুপ্রবেশ ৷ আমি স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় সেটা নিয়ে বলেছি ৷ আমাদের দেশের সম্পদ তারা নিয়ে নেবে এটা হতে পারে না ৷ তাই আমি একটি ডেমোগ্রাফি মিশনের বার্তা দিয়েছি ৷ কিন্তু কংগ্রেস ও আরজেডি তাদের ভোট ব্যাঙ্কের স্বার্থে এই অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করতে চায় ৷”
কংগ্রেস বিহারবাসীর প্রতি অসংবেদনশীল ৷ এই অভিযোগ করে গয়ার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কংগ্রেসের এক মুখ্যমন্ত্রী একটি জনসভায় বলেছেন, বিহারের কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে তাঁর রাজ্যে ঢুকতে দেবেন না ৷ আর তাদের জোটসঙ্গী আরজেডি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ৷ এই ধরনের অপমানের জবাবটুকুও দিতে পারেনি ৷”
এদিন বিহারে 13 হাজার কোটিরও বেশি মূল্যের উন্নয়নমূলক প্রজেক্টের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি ৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান, মুখ্য়মন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতন রাম মাঝি ৷ এদিন তিনি গয়া থেকে দিল্লীগামী অমৃত ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেন ৷