রাঁচিতে প্রস্তাবিত আরআইএমএস-২ (RIMS-2) সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদ চলছিল। রবিবার আদিবাসী সংগঠনগুলির ডাকা ‘হাল চালাও রোপা রোপো’ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আগেই গৃহবন্দি করা হল ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেনকে।
সকালে তিনি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, “নাগদি এলাকার আদিবাসী কৃষকদের কণ্ঠরোধ করার জন্য আমাকে সকাল থেকে গৃহবন্দি করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার।” পরে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, সকাল ৭টার দিকে ডিএসপি এসে তাঁকে বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করেন। তাঁর দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ এই আন্দোলনে যোগ দিতে আসছিলেন, কিন্তু তাঁদের অনেককেই পুলিশ মাঝপথে আটকায়।
আরও পড়ুনঃ রাজাবাজারে রক্তারক্তি কাণ্ড! আচমকা চপার নিয়ে আইনজীবীকে আক্রমণ ৩ যুবকের
নাগদির জমি বাঁচাও সংগ্রাম সমিতির নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। সংগঠনের দাবি, যে জমিতে হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা করছে সরকার, তা আদিবাসীদের প্রথাগত চাষের জমি। এ জমি অধিগ্রহণ মানে তাঁদের জীবিকা কেড়ে নেওয়া।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরফান আনসারি জানিয়েছেন, ওই জমি স্থানীয়দের নয় এবং তাঁদের স্বার্থ এতে ক্ষুণ্ণ হবে না। তাঁর দাবি, ১ হাজার কোটি টাকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক সমর্থিত এই প্রকল্প ঝাড়খণ্ডের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ‘গেমচেঞ্জার’ হবে।
রাঁচিতে প্রস্তাবিত ২,৬০০ শয্যার সুপার স্পেশালিটি এই হাসপাতাল তৈরি হবে ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালের আদলে। কার্ডিওলজি, অনকোলজি, নিউরোসার্জারি, অর্থোপেডিক্সের মতো উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা থাকবে। থাকবে মেডিক্যাল কলেজ, গবেষণা কেন্দ্র ও টেলিমেডিসিন ইউনিটও। সরকারের দাবি, এটি গড়ে উঠলে রাঁচি হবে পূর্ব ভারতের স্বাস্থ্যসেবা ও মেডিক্যাল ট্যুরিজমের অন্যতম কেন্দ্র।
আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, রবিবার ভোর থেকেই তাঁদের অনেককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাগদি জমি বাঁচাও সংগ্রাম সমিতির কর্মী সিতা কাচ্হাপ জানান, “ভোর ৪টে নাগাদ পুলিশ আমাদের মধ্যে পাঁচজনকে, চারজন মহিলা-সহ, বাড়ি থেকে তুলে কাঁকে থানায় নিয়ে যায়। কোনও কারণ দেখানো হয়নি, শুধু বলা হয় এখানে বসে থাকতে হবে।”
কাচ্হাপের দাবি, “এ লড়াই আমাদের ঐক্য ভাঙতে পারবে না। এটি আদিবাসী জমির জন্য এখন জীবন-মরণ সংগ্রাম।”
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, নাগদিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সোরেন, তাঁর ছেলে-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকেও আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে আটকানো হয়েছে।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারান্ডি এই ঘটনাকে “গণতন্ত্রের হত্যা” বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি এক্স-এ লেখেন, “জনগণের পাশে থাকা এবং তাঁদের অধিকার রক্ষা করা বিরোধী দলের দায়িত্ব। বিজেপি সবসময়ই আদিবাসীদের অধিকার ও জমি রক্ষার জন্য লড়াই করেছে এবং করবে। হেমন্ত সরকার শুনে রাখুক, আদিবাসীদের জমি থেকে এক ইঞ্চিও কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না।”