নাহ বিয়ে আর করব না, বাকি জীবনটা শ্মশানেই কাটিয়ে দেবো। হ্যাঁ, এই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন শ্মশানের মহিলা ডোম টুম্পা দাস। বয়স মাত্র ২৯। পুরো পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র মহিলা ডোমও বটে। অভাবের তারণায় বারুইপুরে জোড়া মন্দির শ্মশানে ডোমের কাজ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মৃতদেহ দাহ করে চলেছেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেছেন বড় মেয়ে টুম্পা। বয়স অল্প হলেও কাঁধে রয়েছে গুরুদায়িত্ব। সংসারে রয়েছে ছোট বোন,বোনের একটি ছোট সন্তান,ভাই আর মা। বড় দিদি টুম্পা বহু বছর ধরে সংসার চালান। আগে নার্সিংহোমে চাকরি করলেও সেই চাকরি খরচের কারণে চালিয়ে যেতে পারেননি। ফলে বাড়ির পাশে শ্মশানে চাকরি পান টুম্পা। মাত্র ৫ হাজার টাকা বেতনে নির্ধিয়ায় মৃতদেহ দাহ করা, চুল্লিতে ঢোকানো, অস্থি দেওয়া, মৃতের কাপড় জামা সরানো সমস্ত কাজ তিনি একাই করে চলেছেন। প্রথমে কাঠে পোড়ানোর সমস্ত কাজ করতেন তিনি।
আরও পড়ুনঃ আজ ললিতা সপ্তমী; নবদ্বীপে মহোৎসবের আয়োজন
বড্ড ভালোবেসে ফেলেছেন নিজের এই কাজকে। আর মহিলা হয়ে ডোমের কাজ করাকে কিছুতেই মেনে উঠতে পারেন না অনেকে। যার কারণে একবার বিয়ে ঠিক হলেও ভেঙে যায় তার। মেয়ে ডোমকে ঘরের বৌ করতে নারাজ ছেলের বাড়ি।
আরও পড়ুনঃ মা শ্বেতকালীর দর্শন, এবারের পুজোতে একদিনের গন্তব্য
টুম্পা নিজের সংসারের খরচ চালানোর জন্য জীবনে নিজের প্রেমকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। কারণ প্রেমিক মানতে পারে নি যে প্রেমিকা নিজের সমস্ত উপার্জন করা টাকা নিজের বাড়িতে দিয়ে দেবে। এছাড়াও টুম্পা জানান, তিনি আর বিয়েটা করতে চান না, কারণ তার পেশাকে কিছুতেই মানবে না কোনও ছেলের বাড়ি। আর টুম্পা তার পেশাকে ভীষণ ভালোবাসেন, ফলে বাকি জীবনটা শ্মশানেই কাটাবেন বলে মনস্থির করেছেন।প্রায় ১২ ঘন্টা এই শ্মশানে একাই ডিউটি করেন টুম্পা। এমনকি নাইট ডিউটিও করেন তিনি। ভালো, মন্দ নানা ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হোন তিনি। এমনকি মৃতদেহ বাড়ির মদ্যপ যুবকদের খপ্পরেও পড়তে হয় তাকে। সেই পরিস্থিতি টুম্পা দাস নিজে একাই সামাল দেন। পাশাপাশি প্রত্যেক দিন এত দেহ দাহ করেন যে কখনও কখনও তার নিজেরই মন খারাপ লাগে। একবার এক ছোট শিশুর দেহ দাহ করতে গিয়ে ভেঙে পড়েন তিনি। টুম্পা ভাবেন তার যদি আগে বিয়ে হত তাহলে আজ হয়ত এমন ছোট শিশু তার ঘরে থাকতো। প্রতিনিয়ত শ্মশানে নানা অভিজ্ঞতার শিকার হোন তিনি, তবুও তিনি এই পেশাকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত করে যাবেন বলে জানান। এই পেশার জন্য তিনি নিজের বিয়ে, সংসার করতে রাজি নন। যদি কেউ তাকে ও তার পেশা, পরিবারকে মানতে রাজি হয় তাহলে অবশ্যই তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন। টুম্পা দেবীর মানসিক জোড়কে কুর্নিশ জানাই। একজন মহিলা হয়ে ভয়, ডরকে উপেক্ষা করে তিনি এই পেশার সাথে যুক্ত তা সত্যিই অভাবনীয়।