কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
শিলিগুড়িতে জেলা কমিটি নিয়ে ক্ষোভের মধ্যেই গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে মহকুমার খড়িবাড়িতে বিজেপির একের পর এক পদাধিকারী পদত্যাগ করছেন। রানিগঞ্জ বিন্নাবাড়ি মণ্ডলে গত চারদিনে ১১ জন পদাধিকারী পদত্যাগ করেছেন। ওই মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক, সহকারী সম্পাদক থেকে শুরু করে যুব মোর্চার সভাপতি, শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ ইতিমধ্যে ইস্তফা দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক তাপস মাঝি, সহ সম্পাদক নির্মল সরকার, সহ সভাপতি বীরেন শিকদার, যুব মোর্চার মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক রাকেশ সিংহ, অঞ্চল সভাপতি মৃন্ময় রায়, মণ্ডলের দুই নম্বর শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ সোবিন্দ বর্মন। প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সূত্রের খবর, মূলত মণ্ডল সভাপতির সঙ্গে সাধারণ সম্পাদকের বিরোধের জেরেই এই গণ ইস্তফা।
আরও পড়ুনঃ মিঠুনের ১০০ কোটির মানহানি মামলা, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে কুণাল ঘোষের জবাব ‘কোর্টেই দেখা হবে’
রানিগঞ্জ-বিন্নাবাড়ি মণ্ডল সভাপতি রিনা মণ্ডলের বিরুদ্ধে দলেই অভিযোগ, তিনি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার জন্য বিক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠকে বসেছিলেন দলের সঙ্গে কথা না বলেই। সে ব্যাপারে পরবর্তীতে বিজেপি পদাধিকারীদের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহারও করেন। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। রিনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে সাংবাদিক পরিচয় শুনে কথা বলতে চাননি।
ফাঁসিদেওয়ার এই মণ্ডলে বিজেপির সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী। ফাঁসিদেওয়ার বিজেপি বিধায়ক দুর্গা মুর্মু বলেন, ‘ইস্তফার বিষয়টি শুনেছি। জেলা সভাপতি ও উচ্চ নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়ে সকলকে নিয়ে একসঙ্গে বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে দলের এই অভ্যন্তরীণ বিরোধের যদি সমাধান না হয় তবে তা দলকে প্রভাবিত করবে।’ বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডল আলোচনায় বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘ইস্তফার খবর এখনও পাইনি। সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হবে। মণ্ডল সভাপতি যদি অনাস্থার জন্য রানিগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করে থাকেন, সেটা দলীয়ভাবে আলোচনা করা হবে।’
বিজেপির জেলা কমিটি এবং মণ্ডল কমিটি তৈরি হওয়ার পর থেকেই দলের অন্দরে ব্যাপক ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে। অভিযোগ, সক্রিয় কর্মীদের ছেঁটে সেই জায়গায় এমন কিছু লোককে বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে যাঁরা পার্টির কাজে সেভাবে যুক্তই থাকেন না। জেলা কমিটিতে এমন দুজন সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন যাঁদের দলীয় কোনও কর্মসূচিতে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, সম্পাদক পদেও এমন লোককে নিযুক্ত করা হয়েছে যিনি এর আগে চোরাই গাড়ির ব্যবসায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। অভিযোগ, মণ্ডল সভাপতি পদে যাঁদের বসানো হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগেরই দলে সক্রিয় ভূমিকা নেই। বর্তমান কমিটির যাঁরা মাথা তাঁদের ঘনিষ্ঠদেরই জায়গা দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে দলের অন্দরে মারাত্মক ক্ষোভও তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলের একাধিক সক্রিয় কর্মী ধীরে ধীরে বসে যাচ্ছেন।
খড়িবাড়িতে রানিগঞ্জ-বিন্নাবাড়ি মণ্ডল সভাপতির সঙ্গে পুরোনো নেতাদের বিরোধ চরমে উঠেছে। সেই অসন্তোষের জেরে গত ২৯ অগাস্ট থেকে বুধবার পর্যন্ত ১১ জন পদাধিকারী ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। সকলের পদত্যাগপত্রের ধাঁচ একই থাকায় কর্মীদের ধারণা তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেই গণ পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ শঙ্কায় কর্মীরা! বেতন অনিশ্চিত NBSTC-র
ওই মণ্ডলের সদস্য সংখ্যা ৬১। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রয়েছেন। দলের মণ্ডল সাধারণ সম্পাদক তাপস মাঝির অভিযোগ, ‘নতুন সভাপতি একক সিদ্ধান্তে কাজ করছে। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে ওঁর তালমিল হচ্ছে না। সভাপতির সাংগঠনিক দক্ষতার অভাব থাকা সত্ত্বেও কারও সঙ্গে পরামর্শ করছেন না। নতুন সভাপতি দলীয় কর্মীদের সঙ্গে রুঢ়ভাষায় কথাবার্তা বলেন। জেলা সভাপতিকে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ইস্তফা দিয়েছি।’ সহ সভাপতি নির্মল সরকারও একই অভিযোগ তুলেছেন। যুবমোর্চার অঞ্চল সভাপতি মৃন্ময় রায় বলেন, ‘রানিগঞ্জ পানিশালী গ্রাম পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য সভাপতি গোপনে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ সদস্যদের সঙ্গে দুধিয়া পাহাড়ে বৈঠক করেছেন। এছাড়া সংগঠনের কর্মীরা আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশি ঝামেলায় পড়লে কোনও সহযোগিতা করেন না নতুন সভাপতি। তাই ইস্তফার সিদ্ধান্ত।’
বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি ভোলানাথ সিদ্ধা বলেন, ‘ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা ক্ষেত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী রানিগঞ্জ-বিন্নাবাড়ি মণ্ডল। এই মণ্ডলের ৫২টি বুথের মধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে ৫১টিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। খড়িবাড়ি ব্লকে বিজেপির দুর্গা মুর্মু লিড দিয়েছিলেন ২৭ হাজার ৭১১ ভোটে। এরমধ্যে রানিগঞ্জ-বিন্নাবাড়ি লিড দিয়েছিল প্রায় ১৭ হাজার ভোটে।
এদিকে, জেলা কমিটিতে হিন্দিভাষীদের জায়গা দেওয়া হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে মঙ্গলবার জেলার গ্রুপে এক নেতা পোস্ট করেছেন। দিলীপ সিং নামে ওই নেতা আগে শিলিগুড়ির ২ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এবার তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে আরও কিছু সক্রিয় নেতাকেও বসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এই বিষয়টি নিয়েও জেলা কমিটিতে কথা উঠেছে।



