কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
তৈরি চায়ের দাম অনেকটা পড়ে যাওয়ায় উত্তরবঙ্গের চা শিল্প গভীর সংকটে। এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের হস্তক্ষেপ চাইল। শুক্রবার সংগঠনের তরফে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে চিঠি পাঠিয়ে দ্রুত কেন্দ্রীয় সরকার ও চা পর্ষদের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয়কুমার আগরওয়াল (ধনুঠি) বলেছেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার উৎপাদিত চায়ের দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় উত্তরবঙ্গের অনেক চা কারখানা বন্ধের মুখে।
আরও পড়ুনঃ ‘চিরসখা হে…’ শ্রীকৃষ্ণ ট্রাম্পের ডাকে কাতর সাড়া দিলেন সুদামা মোদী
উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর এবং বিহারের কয়েকটি অংশ মিলিয়ে ২৫০টির বেশি বটলিফ চা কারখানা রয়েছে। এই কারখানাগুলি ক্ষুদ্র চা চাষিদের কাছে কাঁচা চা পাতা কিনে কারখানায় চা তৈরি করে সেগুলি বাজারজাত করে। উত্তরবঙ্গের উৎপাদিত চায়ের প্রায় ৫৫ শতাংশ বটলিফ কারখানা থেকে আসে বলে নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে সংগঠন জানিয়েছে, গত বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাজারে উৎপাদিত চায়ের কেজি প্রতি দাম ছিল ১৬৫-১৯০ টাকা। এবার জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত সেই বাজারদর ৯০-৯৮ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠন কাঁচাপাতার ন্যূনতম দাম (মিনিমাম সাস্টেনেবল প্রাইস বা এমএসপি) কিলো প্রতি ৩৫ টাকা করার দাবি কেন্দ্রীয় শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রককে জানাল। শুক্রবার কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (সিস্টা) প্রতিনিধিরা দিল্লিতে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব (বাগিচা) কেশং ওয়াই শেরপা ও নির্দেশক (বাগিচা) নীরজ গাব্বার সঙ্গে দেখা করেন। সিস্টা-র সর্বভারতীয় সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, ‘উৎপাদন ব্যয়ের থেকেও কম মূল্যে কাঁচা পাতা বিকোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যূনতম ৩৫ টাকা দাম না পেলে চাষিদের পক্ষে বেঁচে থাকা দুষ্কর।’
আরও পড়ুনঃ উত্তপ্ত নদিয়ার তেহট্টের নিশ্চিন্তপুর; আইন হাতে তুলে নিল সাধারণ মানুষ
উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র চা চাষিদের যৌথ মঞ্চ ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফোরাম অফ স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রজত রায়কার্জির বক্তব্য, ‘নেপাল, কেনিয়া সহ আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশ থেকে সস্তার চা এদেশে বিনা শুল্কে বা নামমাত্র শুল্কে আমদানি হচ্ছে। যার গুণগতমান খারাপ। এর প্রভাব উত্তরবঙ্গের ৫০ হাজার সহ ভারতের আড়াই লক্ষ চা চাষির ওপর পড়ছে। বর্তমানে প্রথাগত চাষিদের জন্য প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি যোজনা, প্রধানমন্ত্রী ফসলবিমা যোজনা, কিষান ক্রেডিট কার্ড ও প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনার মতো ২৮টি প্রকল্প রয়েছে। তার কোনও সুফল ক্ষুদ্র চা চাষিরা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। টি বোর্ড এব্যাপারে পদক্ষেপ করে বিষয়টি কৃষিমন্ত্রককে জানাবে বলে বৈঠকে ঠিক হয়েছে।’