টানা ১১ দিন। গায়ে সুতো পর্যন্ত থাকবে না। সকলেই নগ্ন হয়ে ঘুরে বেড়াবেন জাহাজে! ২৩০০ যাত্রী নিয়ে সাগরের জলে ভাসবে বিলাসবহুল প্রমোদতরণী। ক্রুজ় বা বিলাসবহুল জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে বেড়ানো পর্যটকদের জন্য অন্যতম বিনোদন। অন্যান্য ক্রুজ়ের মতো বিনোদন ও বিলাসিতার সমস্ত উপকরণ এতে মজুত রয়েছে। এর বিশেষত্ব হল যাত্রীরা কোনও রকম পোশাক ছাড়াই তাঁদের পুরো ভ্রমণটি উপভোগ করতে পারবেন।
শান্ত সমুদ্রপথে ক্রুজ়-ভ্রমণ ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার বহু দেশে জনপ্রিয়। ক্যারিবিয়ান, বাহামা, মায়ামি কিংবা মেক্সিকোর সমুদ্রে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পর্যটক ক্রুজ়ে সফর করেন। সাধারণ জাহাজে ভ্রমণের তুলনায় ক্রুজ়ে ভ্রমণ অনেক বেশি খরচসাপেক্ষ। বিলাসবহুল হোটেলের যাবতীয় স্বাচ্ছন্দ্য মেলে তাতে।
নগ্নতা’— শব্দটিতেই কোথাও লুকিয়ে রয়েছে এক নিষিদ্ধ হাতছানি। সেই নিষিদ্ধ বিষয়টিকে স্বাভাবিক করার জন্যই মূলত এই সমুদ্রযাত্রার আয়োজন। এমনটাই সারা বিশ্বের সামনে উপস্থিত করতে চায় মিয়ামির ভ্রমণ সংস্থা বেয়ার নেসেসিটিস। তাই নরওয়েজীয় পার্ল ক্রুজ়ে ‘দ্য বিগ ন্যুড বোট’ নামের সামুদ্রিক ভ্রমণটি আয়োজন করে সংস্থাটি।
আরও পড়ুনঃ সমুদ্রের তলায় ভয়ঙ্কর ‘বিপর্যয়’, বিশ্বজুড়ে ব্যাহত ইন্টারনেট পরিষেবা
এই ভ্রমণের উদ্দেশ্যই হল নগ্নতা ও যৌনতা যে সমার্থক নয় তা প্রচার করা। মানুষের নগ্নতার সঙ্গে যৌনতা ও লজ্জার ধারণা ভিত্তিহীন। নগ্নতাকে স্বাভাবিক ও ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করার বার্তা দিতে এই উদ্যোগের আয়োজন করা হয়েছে, এমনটাই দাবি করে বেয়ার নেসেসিটিস। প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সমুদ্রে ভাসে বিলাসবহুল জাহাজ।
‘‘১৯৯০ সাল থেকে আমরা সামাজিক নগ্নতার বিরুদ্ধে বাধা ভেঙে ফেলার জন্য কাজ করে আসছি। সামাজিক নগ্নতা ও যৌন কার্যকলাপ সমার্থক নয়। আমরা এই ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টা করি। নগ্নতা স্বাভাবিক বিষয় ও সৌন্দর্যের প্রতীক’’, একটি বিবৃতিতে বলেছে সংস্থাটি।
২০২৬ সালে প্রেমের মাসে কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে আমেরিকার মায়ামির উপকূল থেকে ভাসবে নরওয়েজীয় পার্ল ক্রুজ়টি। ৯ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়াবে এই বিলাসবহুল তরণী। ক্যারিবিয়ান জুড়ে ১১ দিনের সফরে বেরোচ্ছে ক্রুজ়টি। জাহাজের বিলাসিতায় গা ডুবিয়ে ছুটি কাটানো ছাড়াও রয়েছে মনোমুগ্ধকর ক্যারিবিয়ান দ্বীপগুলি ঘুরে দেখার বন্দোবস্ত।
মার্টিনিক এবং সেন্ট লুসিয়ার মতো দ্বীপের সৈকতে ভ্রমণ ছাড়াও এবিসি দ্বীপপুঞ্জ (আরুবা, বোনেয়ার, কুরাকাও), জামাইকার মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নিজেদের ডুবিয়ে দিতে পারবেন নারী-পুরুষেরা। এ ছাড়াও নরওয়েজীয় ক্রুজ় লাইনের মালিকানাধীন দ্বীপ গ্রেট স্টিরাপ কে-তে দু’বার থামবে জাহাজটি। যেখানে নগ্ন হয়ে গোটা সৈকতকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে পারবেন যাত্রীরা।
৯৬৮ ফুট দৈর্ঘ্যের এই পার্ল ক্রুজ়টি যেন একটি ভাসমান রিসর্ট। এতে ১৬টি রেস্তরাঁ, ১৪টি বার, বোওলিং লেন, একটি ক্যাসিনো, একটি স্পা এবং বিলাসবহুল ভিলা রয়েছে। ফরাসি ডাইনিং, ব্রাজ়িলীয় বারবিকিউ, অথবা ২৪ ঘণ্টার জন্য খোলা বার্গার জয়েন্ট, সবই মজুত রয়েছে যাতে যাত্রীদের খাবারের কখনওই কোনও সমস্যা না হয়।
রয়েছে অঢেল পানীয়ের ব্যবস্থা। জাহাজে আলাদা করে রাখা হয়েছে হুইস্কি লাউঞ্জও। সমুদ্রযাত্রার একঘেয়েমি কাটাতে চাইলে যাত্রীরা স্পাতে গিয়ে তরতাজা হয়ে আসতে পারেন। শুল্কমুক্ত কেনাকাটা করতে চাইলে তারও উপায় রয়েছে জাহাজে। রাতে ঝলমলে পার্টি থেকে দিনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওয়ার্কশপ, সমস্ত কিছু উপভোগ করার উপকরণ মজুত থাকবে প্রমোদতরণীতে।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিলাসিতা ও কেবিনের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উপর নির্ভর করে টিকিটের দাম ৪৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। প্রতিটি কেবিনে দু’জন যাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে একা একটি পুরো কেবিন ভাড়া নিতে পারেন। আবার কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে অপরিচিত যাত্রীর সঙ্গে কেবিন ভাগাভাগিও করে নিতে পারেন।
নগ্নতাই এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে আয়োজক সংস্থা। জাহাজের সব জায়গায় নগ্ন হয়ে ঘোরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। যাত্রীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ এবং অশ্লীলতা রোধ করার জন্যও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম আরোপ করা হয়েছে জাহাজে।
আরও পড়ুনঃ “এর থেকে তো জেনারেল ট্রেনই ভাল ছিল…”, ‘দমবন্ধ’ পরিস্থিতিতে বনগাঁ AC লোকালের যাত্রীরা
ডাইনিং হল, জাহাজের ক্যাপ্টেনের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময় এবং জাহাজ যখনই নোঙর করবে তখন যাত্রীদের পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। জাহাজ বন্দর থেকে ছেড়ে জলে ভাসার পরে পোশাক খোলায় কোনও বাধা নেই।
এ ছাড়াও, পুল এবং নাচের জায়গায় ছবি তোলার অনুমতি নেই। অন্য দিকে, অবাঞ্ছিত স্পর্শ এবং অশালীন আচরণ কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। ডাইনিং টেবলে খাবার খাওয়ার সময় বাথরোব, অন্তর্বাস পরে ঘোরার অনুমোদন নেই। তবে বুফেতে খাওয়ার সময় নিয়মের শিথিলতা রয়েছে।
কোনও যাত্রী যদি অশালীন আচরণ করতে গিয়ে ধরা পড়েন তখন সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পরের বন্দরে নামিয়ে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি কোনও টাকাও ফেরত পাবেন না।
আয়োজক সংস্থা এই ভ্রমণটিকে ‘নগ্ন-আড্ডা’ তকমা দিয়েছে। তাদের মতে, জীবনে এই ধরনের সুযোগ এক বারই পাওয়া যায় যেখানে কী পরবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয় না। বরং কায়াক, জিপলাইন, স্নরকেলিং নিয়ে মেতে থাকবেন, না সারা দিন অলস ভাবে রৌদ্রস্নান উপভোগ করবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
সমুদ্রযাত্রার মূল্য চড়া হলেও প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ টিকিট কেনার জন্য উদ্গ্রীব থাকেন। এমনকি নগ্ন হয়ে ক্রুজ় ভ্রমণ করার জন্য কোনও কোনও যাত্রী একাধিক বার টিকিট কাটতেও দ্বিধা করেন না। সমাজমাধ্যমে বহু নেটাগরিকই তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছিলেন। কেউ কেউ এটিকে জীবনের সেরা ভ্রমণ বলে অভিহিত করেছেন। অন্যেরা এটিকে অবিস্মরণীয় বলে উল্লেখ করেছেন।