সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
বয়স্ক মা-বাবাকে দেখেন না ‘উচ্চশিক্ষিত’ ছেলে। সেজন্য ছেলের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার গল্প নিয়ে কিছুদিন আগেই ‘সন্তান’ নামে একটি সিনেমা আলোড়ন ফেলেছিল। রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় মিঠুন চক্রবর্তী, অনসূয়া মজুমদার, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় অভিনীত সেই সিনেমা অনেক নিঃসঙ্গ বাবা-মায়ের চোখে জল এনে দিয়েছিল। দেখিয়ে দিয়েছিল বাস্তবতা।
এবার সেই একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা গেল কোচবিহারে। শিক্ষক ছেলে তাঁর বয়স্ক বিধবা মাকে দেখাশোনা করেন না, এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বছর পঁচাত্তরের বৃদ্ধা নীলিমা ঘোষ। প্রতি মাসে মাকে পাঁচ হাজার টাকা খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কিন্তু ছেলে সেই নির্দেশও মানছেন না বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুনঃ কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী; পৌঁছলেন রাজভবন, সোমবার ফোর্ট উইলিয়ামে সম্মেলন
নীলিমাদেবীর পক্ষের আইনজীবী রথীন দাসের কথায়, ‘নীলিমা ঘোষ তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে খোরপোশের মামলা করেছিলেন। বিয়ের পর তাঁর ছেলে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। মাকে দেখতেন না। খোঁজখবরও রাখতেন না।’ আদালত ও পরিবার সূত্রে খবর, নীলিমা ঘোষের চার ছেলে। তার মধ্যে একজন আগেই মারা গিয়েছেন। বাকি তিন ছেলের মধ্যে একজন টোটোচালক ও আরেকজন নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। আরেক ছেলে পেশায় শিক্ষক। নৈশপ্রহরীর কাজ যিনি করেন তিনি মাঝেমধ্যে মায়ের খোঁজখবর নিলেও বাকি দুজন কোনও খবর নেন না বলেই অভিযোগ। টোটোচালক ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো নয় বলে জানিয়েছেন নীলিমাদেবী। তবে শিক্ষক ছেলের আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও মায়ের চিকিৎসা বা দিন গুজরানের কোনও খরচ তিনি দেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।
পারিবারিকভাবে সমস্যা না মেটায় ২০২৪ সালের ৩ মে কোচবিহার সিজেএম আদালতে ওই বৃদ্ধা শিক্ষক ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ঠিক এক বছর পর চলতি বছরের ৩ মে আদালতের তরফে ছেলেকে প্রতি মাসে মাকে ৫ হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নীলিমাদেবীর আইনজীবীর অভিযোগ, ‘আদালতের নির্দেশ থাকলেও সেই টাকা ছেলে তাঁর মাকে দিচ্ছেন না। ফলে আমরা আবার আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’ কোচবিহার শহরের বিবেকানন্দ স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধার কথায়, ‘আমার চোখের অস্ত্রোপচার করতে হবে। রক্তচাপ, সুগার সহ নানা রোগ রয়েছে। চিকিৎসা প্রয়োজন। আমার এক নাতির কাছেই থাকি। ছেলেরা কেউ-ই দেখে না। বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’
নীলিমাদেবীর স্বামী ১৬ বছর আগেই মারা যান। অবশ্য তিনি সরকারি কর্মী ছিলেন। সেই পেনশনের মাসিক নয় হাজার টাকাতেই নীলিমাদেবীর দিন কাটছে।