এ প্রজন্মের খেলাধুলো মানেই মোবাইল স্ক্রিনে আঙুল চালানো। মাঠ ফাঁকা পড়ে থাকে, ছাদে আর ভিড় হয় না কচিকাঁচাদের। ধুলো ওড়া বিকেলেরা বন্দি হয়েছে ছোট্ট স্ক্রিনে। সেখানেই ফুটবল থেকে কবাডি সব খেলা হয়ে যায় ছেলেমেয়েদের। তবু একটা দিন আজও আসে ক্যালেন্ডারে, যেদিন কলকাতার আকাশে আবার শোনা যায় পুরনো ডাক— “ভোকাট্টা!”
সেই দিনটাই আজ, বিশ্বকর্মা পুজোর দিন। প্রযুক্তি আর কংক্রিটের এই শহরে, আজ একবারের জন্য হলেও সবাই তাকায় আকাশের দিকে। ঘুড়ির রঙে ভরে ওঠে চারপাশ, যেন শহরটা হঠাৎ ফিরে যায় নস্ট্যালজিয়ার খোঁজে। বুড়োদের ছাদ থেকে নামতে ইচ্ছে করে না, ছোটরা কার্টুন ছাপানো ঘুড়ি নিয়ে খিলখিল করে হাসে, আর বাবা-মায়েরাও চুপিচুপি প্রতিযোগিতায় নাম লেখায়।
এই উৎসব কেবল ভগবান বিশ্বকর্মাকে নিবেদন নয়— এ শহরের আকাশ-প্রেম, শৈশব আর চিরন্তন খেলার উল্লাসের একসঙ্গে ফিরে আসা।
এবছরেও বিশ্বকর্মা পুজোর সেই রঙিন সেই উৎসবের আমেজ ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে শহরের ঘুড়ির দোকানগুলোতে। উত্তর কলকাতার বাজারে এখন ঘুড়ির ছড়াছড়ি— অসংখ্য রঙ, নকশা আর থিমে সাজানো জাঁকঝমক। কোথাও কোথাও তো ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন দোকানিরা।
আরও পড়ুনঃ ১৯ বছর পর শহরের সঙ্গীতানুষ্ঠানে আরতি মুখোপাধ্যায়
দমদমের এখন যেন রঙিন স্বপ্নের ভাণ্ডার। সারি সারি ঝুলছে শিশুদের জন্য তৈরি প্লাস্টিকের ঘুড়ি। তাতে ফুটে উঠেছে ছোটা ভীমের দুষ্টুমি, মিনিয়নসদের মজার দুনিয়া, কিংবা ডোরেমনের হাসিখুশি জাদু। দামও হাতের নাগালেই— ২০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। বাচ্চাদের চোখে এ ঘুড়িগুলোই আজ সবচেয়ে বড় আনন্দ।
কিন্তু শুধু উৎসব নয়, এ শহরের নিজস্ব আত্মাও ধরা দিয়েছে ঘুড়ির নকশায়। সান্তোষ মিত্র স্কোয়ারের দোকানগুলিতে পাওয়া যাচ্ছে ‘কলকাতা’ ছোঁয়া ঘুড়ি। যেন শহরকে একসঙ্গে আকাশে ভাসিয়ে দেওয়ার এক নির্দিষ্ট মুহূর্ত। মাত্র ২০ টাকার সেই ঘুড়ি যেন পুজো আর শহরপ্রেমের মেলবন্ধন।
আরও পড়ুনঃ ঋগবেদ অনুযায়ী, তিনি সৃষ্টির দেবতা; দ্বারকা থেকে রাবণের লঙ্কা, আর কী কী নির্মাণ করেছিলেন বিশ্বকর্মা?
বিশ্বকর্মা আর ঘুড়ি—এই দুটোকে আলাদা করে তো ভাবাই যায় না। তাই সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে ভগবান বিশ্বকর্মার ছবি আঁকা ঘুড়িও ভিড় জমাচ্ছে। দাম মাত্র ১৫ টাকা। এ ঘুড়ি যেন পূজার আবহকে পূর্ণ করে তোলে, আকাশে এক টুকরো বিশ্বাস উড়িয়ে দেয়।
তার মধ্যেই আগমনীও ধীরে ধীরে ঘনিয়ে আসছে। দুর্গাপুজো আসন্ন, তাই দুর্গা-থিমের ঘুড়িও বাজারে এখন হটকেক। নকশার ছোঁয়ায় পুজোর আনন্দ যেন আরও গভীর হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, বিশ্বকর্মা পুজোর কলকাতা এখন এক রঙিন আকাশের প্রতীক্ষায়। দোকানে মানুষ ভিড় করছেন, হাতে লাটাই আর চোখে আকাশ ভরার স্বপ্ন নিয়ে। কলকাতা যেন আবার সেই চেনা আকাশের অপেক্ষায়। শিশু থেকে বড়, সকলের মনেই একই রোমাঞ্চ— ঘুড়ির সুতোয় বাঁধা একদিনের মুক্তি, আর আকাশভরা ঝলমলে আনন্দ।