বিপন্ন কলকাতা! জলবন্দি গোটা শহর। রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। প্রচুর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। কলকাতা এবং শহরতলির নীচু এলাকাগুলি প্লাবিত। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় পুজোর প্রস্তুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ স্টল। কোথাও ভেসে গিয়েছে বিবিধ সরঞ্জাম। অনেকেই বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে এমন দুর্যোগ দেখা যায়নি। তুমুল এই বৃষ্টি মেঘভাঙা কিনা, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ নিম্নচাপ ও পুজোর সময় বৃষ্টির সতর্কতা; আবহাওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত আপডেট
অনেকেরই বক্তব্য, এমন তুমুল একটানা বৃষ্টি সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। কলকাতা শহরের নীচু এলাকা তো বটেই, যে সমস্ত এলাকায় সচরাচর জল জমে না, সেগুলিও জলের তলায়। একতলা বাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। বহু এলাকায় জমা জলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তায় বা গ্যারাজে দাঁড় করানো গাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। রাতেই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা নীচু এলাকার লোকজনকে সাহায্য করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কোথাও তাঁরা গাড়ি ঠেলে উঁচু জায়গায় তুলেছেন। কোথাও বিপন্ন এবং জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন।
আবহাওয়া যে দুর্যোগপূর্ণ হতে চলেছে, গত দু’দিন ধরেই সেই পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তা যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পৌঁছবে, সে বিষয়ে আগাম কোনও আন্দাজ ছিল না। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা-ও কল্পনাতীত। সোমবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মধ্যরাতের পরে তার তীব্রতা বাড়ে। টানা প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। তখনই বিভিন্ন নীচু এলাকায় জল জমতে শুরু করে। নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, পুজোর প্রস্তুতির জন্য মণ্ডপ তৈরির জিনিসপত্র জমে অনেক এলাকাতেই নিকাশিব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার উপর ভয়ঙ্কর বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুনঃ পুজোয় জামা নয়, কিনুন ছাতা, রেইনকোট; চতুর্থী থেকে আসল ধাক্কা
সকালের আলো ফোটার পরে বৃষ্টির বেগ কমেছে। কিন্তু বৃষ্টি একেবারে থেমে যায়নি। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে যে এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই বানভাসি, সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুর-প্রশাসন ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু জমা জলের পরিমাণ এত বেশি যে, পাম্প চালিয়েও দ্রুত সে জল নামানোর পরিস্থিতি নেই। সময় লাগবে বলে পুর প্রশাসকেরাই জানাচ্ছেন। ফলে বৃষ্টি একেবারে না থামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনেককেই অতীতের বন্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অনেকেই ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বানভাসি পরিস্থিতির সঙ্গে সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে নাজেহাল শহরের তুলনাও করতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতার অনেক এলাকায় সেই বন্যার সময়েও জল জমেনি। এ বার জমেছে। যার প্রেক্ষিতে আবার শহরের নিকাশিব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই নিষেধ সত্ত্বেও প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। যা বর্জ্য হিসাবে নিকাশি নালার মুখ এবং গ্যালিপিট আটকে দেয়। ফলে জমা জল দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারে না। জল জমে থাকলে তা থেকে নানা রোগব্যাধি ছড়ানোরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।