কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী সিনেমা ‘আশিতে আসিও না’-র সেই আইকনিক দৃশ্যটা মনে আছে? যেখানে পুলিশের তাড়া খেয়ে গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় পুকুরে নেমে পড়েছিলেন। পুলিশের উদ্দেশে ভানুর সেই অবিস্মরণীয় ডায়ালগ, ‘আমাকে ধরার আপনার কোনও এক্তিয়ার নেই, আমি এখন জলপুলিশের আন্ডারে।’ এখনও বাংলা সিনেমাপ্রেমীদের মনে সেই ছবি গেঁথে রয়েছে।
‘আশিতে আসিও না’ সিনেমার সেই সিন এখন প্রায়শই দেখ যাচ্ছে শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরেই। পুলিশকে দেখে নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে নেশাগ্রস্ত সমাজবিরোধীরা। এমনকি জলে নেমে তাদের ধরার জন্য পুলিশকে ডাকছে বুক বা গলা জলে দঁাড়িয়ে হাত নেড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কার্যত অসহায় হয়ে পুলিশকে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনঃ ফাঁকা মাঠে গোল মমতার! পুজোর ভিড়ে টিমটিম করছে বিজেপবামেরা গ্যালারিতেই
শিলিগুড়ি ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের শীতলাপাড়ায় মহানন্দা নদীর বাঁধ ও আশপাশের এলাকার দিনরাত নেশা ও জুয়ার আসর বসছে। অসামাজিক কাজকর্মে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষজন। বুধবার জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্ত রায় এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধে এলাকায় আলোর ব্যবস্থা করার জন্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। জয়ন্ত জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন। সাংসদ তহবিল থেকে লাইট লাগাতে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য তিনি রাজি।
এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন জায়গায় নেশার আসর চলছে। ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতেই যে যার মতো লুকোতে ব্যস্ত। স্থানীয় বাসিন্দা তপন শীলের কথায়, ‘পুলিশের টহলদারি বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ নেশাখোরদের ধরতে এলেই তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে পালিয়ে যাচ্ছে। জলে নেমে পিছুধাওয়া করলে ওই ব্যক্তিদের বিপদ ঘটতে পারে, সেই আশঙ্কায় পুলিশকর্মীরা কার্যত পিছু হটে যাচ্ছেন।’
আরও পড়ুনঃ দেবীপক্ষের চতুর্থী, দেবীর কৃপায় ভাগ্য প্রসন্ন এই চার রাশির
নদীর পাশে ঝোপঝাড় রয়েছে। সেখানে এলাকার লোকজনই আবর্জনা ফেলায় ডাম্পিং গ্রাউন্ডের চেহারা নিয়েছে। পাশে একটি খেলার মাঠ ও পার্ক রয়েছে। আর নদীর আশপাশে হরদম মাদক, মদের নেশার আসর বসায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। স্থানীয় বিজেপি নেতা নীলু দত্ত বলেন, ‘বহিরাগতদের পাশাপাশি স্থানীয় কিছু তরুণ ওই নেশার আসরে যোগ দিচ্ছে। পুলিশকে এলাকার মানুষ স্মারকলিপি দেওয়ার পর টহলদারি বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ এলে নেশাখোররা নদীর জলে নেমে পালিয়ে যায়।’ নীলুর সংযোজন, ‘সমাজবিরোধীদের দাপাদাপিতে অনেক মানুষ বাড়ি বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। যেখানে নেশার আসর বসে সেখানে পুলিশ সিসিটিভি বসাক, সেই দাবি জানাচ্ছি। প্রয়োজনে স্থানীয়রা সহযোগিতা করব।’
বিষয়টি নিয়ে এনজেপি ফাঁড়ির এক আধিকারিক বলেন, ‘শীতলাপাড়া এলাকায় নিয়মিত পুুলিশ টহলদারি চলছে। উৎসবের মরশুমে আরও কড়াকড়ি চলবে।’