সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ
অবৈধভাবে ভারতে পুজো দেখতে আসাই যেন কাল হল বাংলাদেশি হিন্দুদের। পুলিশের হাতে পাকড়াও। এদিকে আবার অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব ছেড়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে উৎসাহিত করার পাশাপাশি CAA-এর পর্ষে জোরাল সওয়াল করলেন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেত্রী। একইসঙ্গে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার সহজ পথও বাতলে দিলেন। অন্যদিকে লাগাতার অনুপ্রবেশ নিয়ে ক্ষোভ ফুঁসছেন গ্রামবাসীরা।
ঘটনা কোচবিহারের হলদিবাড়ি ব্লকের পারমেখলিগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাড়সিংহাসন এলাকায়। সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকতেই সীমান্ত এলাকায় থাকা এ দেশের বাসিন্দারা তাঁদের ধরেন। খবর যায় পুলিশের কাছেও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে বৃহস্পতিবার রাতের দিকে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে তিস্তা নদীর উন্মুক্ত সীমান্তের দিক থেকে দুই ব্যক্তিকে বাইকে চাপিয়ে দেওয়ানগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল এক বাইক আরোহী। বাইক চালক এবং সওয়ারিরা অপরিচিত হওয়ায় সন্দেহ গ্রামবাসীদের। তাঁদের থামতে বললেও তাঁরা দ্রুত বাইক চালিয়ে চলে যায়। আর তাতেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হয় গ্রামবাসীদের। বাইকের পিছনে ধাওয়াও করেন অনেকে। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে বাইকের দুই সওয়ারিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় চালক। তখনই দুই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন গ্রামবাসীরা।
আরও পড়ুনঃ পুজো শুরুর আগেই সন্তোষ মিত্রতে নিরঞ্জনের বার্তা সজলের
তাঁদের কথাবার্তা শুনেই গ্রামবাসীরা জানতে পারেন তাঁরা আদপে বাংলাদেশের বাসিন্দা। দুর্গাপুজো দেখতে এ দেশে ঢুকেছিল। সব শোনার পর গ্রামবাসীরাই খবর দেন হলদিবাড়ি থানায়। খবর পেয়ে এলাকায় আসে পুলিশ। দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন দশরথ রায় (২৭) ও কালীদাস রায় (৫০)। তাঁদের বাড়ি বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার ডোমার গ্রামে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু ভারতীয় টাকা ও একটি মোবাইল ফোন। শুক্রবার দুপুরে ধৃতদের হলদিবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। মেখলিগঞ্জ মহকুমা আদালতে তোলা হলে ৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুনঃ কচ্ছপের গতি পেরিয়ে অবশেষে আধুনিকীকরণ, BSNL ‘ফোর জি’ পরিষেবার সূচনা প্রধানমন্ত্রীর
স্থানীয় বাসিন্দা মনকান্ত রায় ও যোগেশ রায়রা বলছেন, “ঝাড়সিংহাসন গ্রাম ভারতের শেষ সীমানা। এরপর বাংলাদেশ। এখানে তিস্তার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। ওই সীমান্ত দিয়ে মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে।” অন্যদিকে বিশিষ্ট আইনজীবী তথা হিন্দু জাগরন মঞ্চের উত্তরবঙ্গের কোর্ডিনেটর পাঞ্চালী দেব শিকদার নাগ আবার এ ঘটনার পরই বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি বলছেন, “বাংলাদেশে হিন্দুদের কী করুণ পরিণতি হয়েছে তা আমরা সকলেই জানি। ওই দেশে থাকা হিন্দুরা দুর্গাপুজোয় সামিল হতে পারছেন না। কিন্তু ভারত হিন্দুদের জন্য সুরক্ষিত। এরা আবেগতাড়িত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছে। গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার সিএএ চালু করেছে। ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার নিয়ম শিথিল করেছে। তাই আমাদের আবেদন যদি আপনারা অত্যাচারিত হয়ে থাকেন তবে আপনারা ওই দেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে ভারতের নিয়ম মেনে নাগরিক হওয়ার আবেদন করুন।”