সকাল থেকেই মণ্ডপে মণ্ডপে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা নিরঞ্জনের। তৎপর পুলিশও। কলকাতা পুলিশ এলাকায় গোটা শহরে গঙ্গা, পুকুর মিলিয়ে মোট ঘাটের সংখ্যা ৮৩টি। প্রতিমা নিরঞ্জন করতে যাওয়ার ২১৬টি পয়েন্টে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।
গঙ্গার ২৮টি ঘাটেই থাকছে পুলিশ। মূল দায়িত্বে থাকছে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ। কোনওরকম বিশৃঙ্খলা, অঘটন এড়াতে ২৯টি ঘাট ও পুকুরে থাকছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬২টি টিম। গঙ্গার ২৫টি ঘাটে ডুবরি-সহ পুলিশের বোট প্রস্তুত থাকছে।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুজো শেষের দিন বিদায়ের শোক, তবু কেন বলা হয় ‘শুভ বিজয়া’?
এছাড়াও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৫ জন বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ডুবুরি স্কুবা ডাইভিং সেট সহ স্পিড বোটে গঙ্গার ঘাটগুলোতে টহল দেবে। ৬ জন ডুবুরি বাজা কদমতলা ঘাটে পুলিশের লঞ্চে তৎপর থাকছে। এই পুলিশি বন্দোবস্ত থাকছে ২ অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত।
আজ দশমী। বিসর্জনের পালা। কিন্তু বৃহস্পতিবার পড়ায় অধিকাংশ পুজোমণ্ডপে আজ সপরিবার থাকছেন উমা। শুক্রবার থেকে ঘাটে বিসর্জনের চাপ বাড়বে। সুষ্ঠুভাবে নিরঞ্জনপর্ব যাতে সম্পন্ন হয়, সেজন্য কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশ যৌথভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আজ থেকে ঘাটে নিযুক্ত রয়েছেন পুরসভার সাফাইকর্মীরা। বুধবার নবমীর দুপুরে পুর কমিশনার ধবল জৈন সব বিভাগের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে ঘাটের প্রস্তুতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন।
প্রতিটি ঘাটে একজন করে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। বিসর্জন কাজে তদারকি করবেন তাঁরা। ঘাট চত্বরে থাকছে অ্যাম্বুল্যান্স। ঘাটে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিসর্জনের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করবে কলকাতা পুলিশ। বাড়ি ও বারোয়ারি মিলিয়ে কলকাতায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুজো হয়। এর মধ্যে বাড়ির প্রায় ২৫০টি। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটে বেশিরভাগ প্রতিমা বিসর্জন হয়। আজ, দশমীর ভিড় সামলানোর পাশাপাশি ঘাটে নিরঞ্জন পর্বও সামলাতে প্রস্তুত রয়েছে লালবাজার। ঘাটে পাড়ে আজ থেকে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকছে। গঙ্গায় টহল দেবে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ। ড্রোন দিয়ে আকাশপথে নজরদারি চালানো হবে। বসানো হয়েছে অতিরিক্ত সংখ্যক সিসিটিভি ক্যামেরা। জল পুলিশের দপ্তরে একটি রেসকিউ টিম তৈরি থাকছে। সেখানে থাকছেন পাঁচজন ডুবুরি। বাজে কদমতলা ঘাটে একটি বিশেষ লঞ্চে থাকছেন ৬ জন ডুবুরি।
আরও পড়ুনঃ বিজয়া দশমীতে ধৃতি যোগ, বিসর্জনের বিষাদে কী আছে কার ভাগ্যে?
এছাড়াও বাগবাজার ঘাট, বাজে কদমতলা ঘাট, গোয়ালিয়র ঘাট ও নিমতলা ঘাটে মোতায়েন থাকছে ডিএমজির বিশেষ বাহিনী। নজরদারির জন্য সাতটি ঘাটে থাকছে ওয়াচ টাওয়ার। প্রত্যেকটি ঘাটে একজন করে ইন্সপেক্টরের আওতায় মোতায়েন থাকছে পুলিশের টিম, যার নজরদারি করবেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও ডিসিরা। বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ঘাট সাফাইয়ের কাজে পুরসভার সঙ্গে সহযোগিতা করবে পুলিশও। জোয়ারের সময়ও অনেক পুজো কমিটির লোকজন বিসর্জন দিতে নামেন। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা রুখতে ঘাটে মাইকিং করে প্রচার চালানো হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে নিরঞ্জন প্রক্রিয়া সারতে এবারও জোয়ার-ভাটার সময় অ্যালার্ট দেওয়া হবে পুজো কমিটিগুলির মোবাইল ফোনে। নিমতলা, বাজেকদমতলা, গোয়ালিয়র ঘাট ও বিচালিঘাটে চারটি বোট থাকছে যাতে জলে প্রতিমা ফেলার পর কাঠামোগুলি সরিয়ে ফেলা যায়। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত উদ্ধারকাজ করা যায়, সেজন্য ডিসি কমব্যাটের নেতৃত্বে উদ্ধারকারী টিম থাকছে।
কোনও পুজো কমিটি যাতে ডিজে না বাজায়, সেদিকে কড়া নজর রয়েছে পুলিশের। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কলকাতার ২৩৮টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ পিকেট থাকছে। কেউ যদি ডিজে বাজায় অথবা সেরকম কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে, সঙ্গে সঙ্গে সেই পুজো কমিটির বিরুদ্ধে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে। আয়োজকদের গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। নবমীর দিন পুর কর্তৃপক্ষ গিয়ে ঘাট পরিদর্শন করে এসেছে। বিসর্জনের আবর্জনা ভেসে এসে জলের পাইপলাইনের মুখ যাতে বন্ধ না হয়, সেদিকে নজর রাখতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ দপ্তর ও নমামি গঙ্গে প্রকল্পের আওতায় গঙ্গার দূষণ আটকাতে প্রতিটি ঘাটের দু’দিকে বাঁশের অস্থায়ী খাঁচা করা হয়েছে। বিসর্জনের আগে ফুল, বেলপাতা এবং অন্যান্য উপচার ঘাটের পাশে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেজন্য বসানো হয়েছে ডাস্টবিন।