Tuesday, 14 October, 2025
14 October
Homeআন্তর্জাতিক নিউজPOK: বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে PoK; বদলে যেতে চলেছে পাকিস্তানের মানচিত্র?

POK: বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে PoK; বদলে যেতে চলেছে পাকিস্তানের মানচিত্র?

এই লড়াই যতটা পেটের দায়ে, ততটাই টিকে থাকার, যতটা অধিকারের, ততটাই আবার ‘আজ়াদির’।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

এই লড়াই যতটা পেটের দায়ে, ততটাই টিকে থাকার, যতটা অধিকারের, ততটাই আবার ‘আজ়াদির’। নতুন করে কাহিনী বুনছে পাক দখলকৃত কাশ্মীর। এই কাহিনী সংগ্রামের। এই কাহিনী হয়তো ‘আজ়াদির’। জ্বলছে অধিকৃত কাশ্মীর। প্রতিবাদ-আন্দোলন ও সবশেষে সংঘাত পরিস্থিতি। এই সংগ্রামে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৫ জনেরও অধিক। আহত হয়েছে প্রায় ২০০ জন। গত ৭২ ঘণ্টায় বেড়েছে প্রতিবাদের ঝাঁঝ। পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরের বেশির ভাগ এলাকায় পুলিশ-সেনায় হয়েছে ছয়লাপ, বন্ধ দোকানপাট, বিধ্বস্ত জনজীবন।

আরও পড়ুনঃ প্রেমিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় স্ত্রী! প্রেমিককে কুপিয়ে খুন

এই নুয়ে পড়া সমাজব্যবস্থায় একদিনে ক্ষোভ চড়ে না। এখানে সহ্য ক্ষমতার একটা মাপকাঠি রয়েছে। যা না পেরনো পর্যন্ত বুদবুদের মতো কখনও ফেটে পড়ে না নাগরিক সমাজ। তেমনটাই হয়েছে অধিকৃত কাশ্মীরে। বিস্ফোরণ হয়েছে নাগরিক মনে। গত কয়েক দশক ধরে চেপে রাখা ক্ষোভ এবার ফেটে বেরিয়ে আসছে। আর এই বিক্ষুদ্ধদের এক ছাতার তলায় আনছে একটি সংগঠন। ২০২৩ সালের মে মাসে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পথে নামে বিক্ষুব্ধ জনতা। সেই সময় দাবি ছিল কয়েকটি। মূলত, আকাশছোঁয়া বাজার ও বিদ্যুৎ দরের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ করে তাঁরা। অভিযোগ তোলা হয়, সীমান্ত হয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচার করে দিচ্ছে একাংশ। যার জেরে মূল্যবৃদ্ধি চরমে পৌঁছে যাচ্ছে। যখন বারবার পাক সরকারকে নাড়া দিয়েছে অধিকৃত কাশ্মীরের বাসিন্দারা, সেই সময় তাদের তরফ থেকে একটা রা কাটতে শোনা যায়নি, এমনটাই অভিযোগ।

ফলত, এরপর যা হওয়ার তাই হল। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এক ছাতার তোলায় নিয়ে আসা হয় এই বিক্ষুব্ধদের। অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফফরবাদে তৈরি হয় জম্মু-কাশ্মীর জয়েন্ট আওয়ামী অ্য়াকশন কমিটি। এরপর অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে পাক প্রশাসন বিরোধী যে সকল ঘটনাক্রম দেখা গিয়েছিল, সেগুলির প্রায় প্রতিটির সঙ্গে এই সংগঠনের যোগ রয়েছে বলে মত একাংশের। এই সংগঠন যত বড় হয়েছে, ততই অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে প্রশাসনের উপর বেড়েছে চাপ।

২০২৪ সালের মে মাস। ঠিক এক বছর। সংগঠন তৈরির স্ফুলিঙ্গ পরিণত হয়ে যায় আগুনে। জয়েন্ট আওয়ামী অ্য়াকশন কমিটির নেতৃত্বে পথে নামে বিক্ষুব্ধ জনতা। বেশ কয়েকদিন প্রশাসনের সঙ্গে চলে সংঘাত। গোটা পর্বে প্রাণ যায় মোট ৫ জনের। এই আন্দোলনের পর অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে অবশেষে উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায় পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে। এটাই প্রথমবার। কমানো হয় আটা-ময়দার দাম। বিদ্যুৎ বিলে দেওয়া হয় ভর্তুকি। কাশ্মীরে ফেরে শান্তি। কিন্তু সাময়িক।

এবার ১ বছরের একটু বেশি সময় পার হতেই বেড়েছে দাবদাহ। সেই ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ পরিণত হয়েছে বিধ্বংসী আগুনে। ছারখার হয়ে গিয়েছে অধিকৃত কাশ্মীর। উঠেছে ‘আজ়াদির’ স্লোগান। উঠেছে ‘কাশ্মীরিদের হাতে কাশ্মীর ফিরিয়ে দেওয়ার’ স্লোগান। সম্প্রতি আবার ধীরে ধীরে পথে নামতে শুরু করে অধিকৃত কাশ্মীরের নাগরিক সমাজ। বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা-সহ একাধিক দাবিতে পথে নামে তারা। সেই সময়ই হঠাৎ করে অধিকৃত কাশ্মীরের ইন্টারনেট, টেলিফোন টাওয়ার সব বন্ধ করে দেয় প্রশাসন, এমনটাই অভিযোগ। তারপরই গত ২৯ সেপ্টেম্বর অধিকৃত কাশ্মীরজুড়ে লকডাউনের ডাক দেন জয়েন্ট আওয়ামী অ্য়াকশন কমিটির চেয়ারম্যান শওকত নওয়াজ মীর। ৩৮ দফা দাবিতে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানোর ঘোষণা করেন তিনি। অবশ্য, সেদিন বিকাল নাগাদ অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য ২ হাজার ৩০০ কোটি পাকিস্তানি রুপির ভর্তুকির ঘোষণা করেন শেহবাজ শরিফ। কিন্তু তারপরেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। কারণ তির ততক্ষণে ধনুক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। গিঁথে গিয়েছে সাধারণের মনে।

অধিকৃত কাশ্মীর জুড়ে প্রতিবাদ সামাল দিতে হাজার হাজার সেনা-পুলিশ মোতায়েন করেছেন পাক প্রশাসন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে ওই শওকত জানিয়েছেন, তারা আন্দোলন স্থগিতের চিন্তাভাবনা করছিল। সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়েছে বলেই উদযাপনের পরিকল্পনাও করে ফেলেছিল। কিন্তু বেশ কয়েক জায়গায় ততক্ষণে প্রতিবাদ সংঘর্ষে পরিণত হয়েছে, পুলিশ-সেনার গুলিতে নিহত হয়ে গিয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাই জারি থাকে আন্দোলন। হত্যালীলার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালায় ওই কমিটি।

বলে রাখা ভাল, এই ৩৮ দফা দাবির মধ্যে যেমন রয়েছে নিজেদের মৌলিক অধিকার ফেরানোর দাবি, তেমনই রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি কমানোর দাবি। তবে এই দাবিগুলি তারা আগেও তুলেছিল। এবারের দাবিপত্রে সংযোজন আরও একটি বিষয়। অধিকৃত কাশ্মীরে যে দাবি সংগঠিত ভাবে উঠল প্রথমবার। জয়েন্ট আওয়ামী অ্যাকশন কমিটি দাবি তুলল, তাদের বিধানসভা থেকে ১২টি সংরক্ষিত আসন সরিয়ে দেওয়ার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিধানসভায় রয়েছে মোট ৫৩টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে ১২টি সংরক্ষিত রয়েছে শরণার্থী হওয়া ভারতীয় কাশ্মীরিদের জন্য।

আরও পড়ুনঃ উত্তপ্ত খানাকুল! রাস্তার মাঝেই গণপিটুনি তৃণমূল নেতাকে

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর যখন কাশ্মীরের একটা অংশ পাকিস্তান দখল করে, তারপর থেকে ভারতের দিকের কাশ্মীর থেকে পাকিস্তানের কাশ্মীরে চলে যাওয়া ভারতীয় নাগরিকদের আশ্রয় দিতে একটি বিশেষ আইন চালু করে পাকিস্তান। তাদের অধিকৃত কাশ্মীরে ওই ভারত থেকে আগত কাশ্মীরিদের শরণার্থী স্বীকৃতি দিতে শুরু করে তারা। আর এই শরণার্থীদের জন্যই অধিকৃত কাশ্মীরের বিধানসভায় মোট ১২টি আসন সংরক্ষণ করা হয়। আওয়ামী অ্যাকশন কমিটির অভিযোগ, এই ১২টি আসনের মধ্য়ে দিয়ে কাশ্মীরের রাজনৈতিক আবহে নিজেদের শক্তি কায়েম রাখে শেহবাজ সরকার। তাই এই সংরক্ষণ বাতিলেও আন্দোলন তাদের।

বৃহস্পতির সংঘর্ষের পর এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ থামাতে অবশেষে বন্দুক নামিয়ে আলোচনার পথ বেছেছে পাক প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে ৮ সদস্যের একটি কমিটি। যারা আলোচনা করবে বিক্ষুব্ধ ওই সংগঠনের সঙ্গে। পাশাপাশি, অধিকৃত কাশ্মীরে শান্তি ফেরানোর বার্তা দিয়েছেন শেহবাজও। এবার দেখার বিষয় কোন পথে যায় অধিকৃত কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ, আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়ে নাকি কমে, আলোচনা কি মেটাতে পারবে সমস্যা? এই নিয়ে ইতিমধ্য়েই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে নয়াদিল্লি। বিবৃতি দিয়ে বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ‘প্রতিবাদী ও সাধারণের নাগরিকের উপর চলা হামলার দায় পাকিস্তানকেই নিতে হবে।’

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন