রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজ আগরওয়াল দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। লোকপাল আইন অনুযায়ী, হলফনামা ছাড়া কোন সরকারি আধিকারিককে অভিযোগ দেওয়া যায় না।
আরও পড়ুনঃ সালারে গণধর্ষণ; নির্যাতিতার পরিবারের পাশে আরএসপি
মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছরের জেল হতে পারে। যখন মন্তব্য করা হয় তখন মুখ্য সচিব কীভাবে সেখানে ছিলেন? মুখ্যসচিবের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন কমিশন দফতরে। এই নিয়ে নির্বাচন কমিশন অসন্তুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। তাদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সময়ে মুখ্যসচিব কী ভাবে উপস্থিত ছিলেন? তাঁর উচিত ছিল বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে কমিশনে চিঠি দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে সিইওর দফতর।
বৃহস্পতিবার নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের ‘বসিয়ে’ রেখে রাজ্যের সিইও ‘অতি সক্রিয়তা’ দেখাচ্ছেন। সিইওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে বলেও জানান তিনি। মমতা হুঁশিয়ারিও দেন সিইও-কে। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশন অসন্তুষ্ট বলে খবর। কমিশনের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের সময় মুখ্যসচিব কী ভাবে উপস্থিত ছিলেন? তাঁর উচিত ছিল বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া। সিইও দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই (সিইও) পদমর্যাদার কোনও অফিসারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া প্রকাশ্যে এ ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ করা যায় না। লোকপাল আইন অনুযায়ী, কোনও সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করতে হলে লিখিত স্বীকারোক্তি দিতে হয়। এমনকি, সেই অভিযোগ সঠিক না হলে অভিযোগকারীর জেল এবং জরিমানাও হতে পারে। কমিশনের এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, লোকপাল আইনের ওই অংশটি মুখ্যসচিবের জানা উচিত। তাই কমিশনের বক্তব্য, সেই সময়ে তাঁর ওই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
সিইও মনোজের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ প্রকাশ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে শুক্রবার চ্যালেঞ্জ ছোড়েন শুভেন্দু। সিইও-র দফতরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য নিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মনোজ আগরওয়াল কী করছেন, মুখ্যমন্ত্রী না বললে দীপাবলির পরে সিইও দফতরে ধর্না দেব। কেন কমিশনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সব আধিকারিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়নি। দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি কেন?’’ এ বিষয়ে তিনি সিইও দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে এসেছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ জানানো হয়েছে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছেও। বিষয়টি খুবই গুরুতর।
আরও পড়ুনঃ গাজ়ায় ইজ়রায়েলের হামলার প্রতিবাদে উত্তাল পাকিস্তান, দফায় দফায় সংঘর্ষ
রাজ্যের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি সিইও-কে আক্রমণ করেছেন। উনি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছেন, সিইও বেড়ে খেলছে। এই ভাষা গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। সরাসরি কমিশনকে হুমকি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সিইও দফতরে শুভেন্দু যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে ওই বৈঠকে মুখ্যসচিবের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন। সেই চিঠি নির্বাচন কমিশনকে পাঠিয়েছে সিইও-র দফতর। তাদের বক্তব্য, কমিশনে কেউ কোনও অভিযোগ জানালে সিইও দফতর নিয়ম মেনেই তা দিল্লিতে পাঠিয়ে দেয়। বিরোধী দলনেতার ক্ষেত্রেও সেই পদ্ধতি মানা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মমতা অভিযোগ করে জানান, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের ‘বসিয়ে’ রেখে রাজ্যের সিইও ‘অতি সক্রিয়তা’ দেখাচ্ছেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বেশি দড়! রাজ্যের সিইও-র বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। সময় হলে বলব। তিনি নিজে নানা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। আশা করব, তিনি বেশি বেড়ে খেলবেন না!’’ এই নিয়েই কমিশন অসন্তুষ্ট বলে খবর।