দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা:
ভূতপেত্নির ভয় না থাকলেও অনেকেই কালীপুজোর আগের দিন, চতুর্দশীতে ১৪ শাক রান্না করেন। কিন্তু, কেন ভূত চতুর্দশীর দিন খাওয়া হয় ১৪ শাক? কী কারণে এই নিয়ম পালন করা হয়?
কেন খাওয়া হয় ১৪ শাক?
অনেকে মনে করেন, এই দিন স্বর্গ এবং নরকের দরজা খুলে যায়। মনে করা হয়, এই দিন ১৪ শাক খেলে পূর্বপুরুষ অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মুক্তি দেন যমরাজ, তাই ভূত চতুর্দশীর দিন পূর্বপুরুষদের আত্মাকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই মূলত ১৪টি মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয় এবং খাওয়া হয় ১৪ শাক।
আরও পড়ুনঃ বাঙালদের রোয়াবিতে জনপ্রিয় কোজাগরী, ঘটিবাড়িতে কালীপুজোর রাতে আরাধ্যা অলক্ষ্মী
ভূত চতুর্দশীর দিন ১৪ শাক খাওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ হল, ১৪ শাক খেলে বাড়ি থেকে অশুভ শক্তি বিদায় হয় বলে বিশ্বাস অনেকের। তবে অনেকেই আবার মনে করেন ঋতু পরিবর্তনের সময় শরীরকে রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষা করে এই ১৪ শাক, ঠিক এমন নানা কারণে ভূত চতুর্দশীর দিন ১৪ শাক খাওয়ার নিয়ম রয়েছে।
১৪ শাকের মধ্যে কী কী থাকে?
১৪ শাকের মধ্যে আপনি খেতে পারেন পলতা, সরষে, নিম পাতা, শুশনি শাক, জয়ন্তী শাক, ওল শাক, ভাটপাতা, কেঁউ শাক, বেতো শাক, পলতা শাক, গুলঞ্চ শাক, শঞ্চে শাক, সৌলফ শাক।
সরষে ও পালং শাকের উপকারিতা
সরষে শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে। শীতকালে এই শাকের ফলনও বেশ ভালো হয়। নিয়মিত এই শাক খেলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া এই শাক দেহে ভিটামিন ডি তৈরি করতেও সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে পালং শাক। এই শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ই এবং আয়রন। আর তাই নিয়মিত পালং শাক খেলে রক্তে আয়রনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুনঃ করালবদনা কালী যেন পাশের বাড়ির শ্যামলা মেয়েটি! আদর করে ‘মা’ বলে ডাকে বাঙালি
কলমি ও পুঁই শাকের উপকারিতা
হজমের সমস্যা বেশি থাকলে এই শাক না খাওয়াই ভালো। তবে পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এই শাক। কলমি শাক বেশি করে রসুন, পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে খেতে পারেন। এটি শরীরে জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। খেতেও ভালো লাগে। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে পুঁই শাকে। এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া পুঁই শাকে রয়েছে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, খনিজ লোহা, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক। এসব উপাদান সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। হার্টের সমস্যা থাকলে এই শাক কিন্তু খাবেন না।
লাল শাক ও গিমা শাকের উপকারিতা
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় লাল শাক। অ্যানিমিয়া যাঁদের রয়েছে তাঁদের জন্য খুবই উপকারী লাল শাক। এছাড়া অ্যামিনো অ্যাসিড, ফসফরাস, আয়রন, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে লাল শাকে। এসব উপাদান ক্যানসার প্রতিরোধ করে। গিমা জন্ডিস,জ্বর, লিভারের অসুখ, সর্দি-কফে উপকারে লাগে এই শাক। এই শাক স্বাদে একটু তেতো। খেলে মুখের অরুচি সারে। বেগুন আলু দিয়ে চচ্চড়ি, বেসন বা ডাল বাটা দিয়ে এই শাকের বড়া খেতে ভালো লাগে।
পাট ও মুলো শাকের উপকারিতা
পাট পাতার বড়া খেতে খুবই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় পাট শাক খুবই উপকারী। এছাড়াও পেটের রোগ, সর্দি, কাশি এসব সারায় পাটপাতা। আর সিজন চেঞ্জে খুবই উপকারী এই পাতা। মুলোর কচি পাতা বা কচি মুলোর শাক লঘুপাক অর্থাত্ সহজে হজম হয়। তেলে বা ঘিয়ে ভেজে মুলো শাক খেলে বাতের ব্যথা সারে। কিন্তু ভাল করে সেদ্ধ না করে খেলে কফ ও পিত্তের সমস্যা বাড়ে।
বেতো ও হিঞ্চে শাকের উপকারিতা
মুখের রুচি ফেরানো থেকে হজম শক্তি বাড়াতে খুবই উপকারে আসে বেতো শাক। এই শাক এখন খুব একটা বেশি পাওয়া যায় না। বেতো শাককে হিন্দিতে বলা হয় ‘বাথুয়া’। টক দই বিট নুন, জিরে ভাজা, রাই, সর্ষের গুঁড়ো দিয়ে এই শাকের রায়তা খেতে অবাঙালিরা খুবই ভালোবাসেন। হিঞ্চে শাক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এই শাকের স্বাদ তেতো। এই শাক শরীর ঠাণ্ডা রাখে, রক্ত পরিষ্কার করে। এই শাক সেদ্ধ করে সর্ষের তেল নুন দিয়ে মেখে ভাতে খেতে ভাল লাগে। এছাড়াও হিঞ্চে শাকের বড়া হয়। যাঁদের অ্যানিমিয়া রয়েছে তাদের এই শাক খেতে বলা হয়।
মেথি শাক
ডায়াবেটিস অর্থাৎ, ব্লাড সুপারের রোগীদের জন্য অত্যন্ত কাজের হল মেথি শাক৷ মেথি শাক কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, হার্ট ভাল রাখে, হজমের সমস্যাও দূর করে। এইসব কারণে প্রাচীন কবিরাজরা এই হেমন্ত ও শীতের সন্ধিক্ষণে এই শাকগুলি খাওয়ার পরামর্শ দিতেন।