ভাইফোঁটা- একটি ছোট্ট বিন্দু, যা প্রজন্মের অন্তরে ভরে রাখে অনন্ত আবেগ। কপালে ফোঁটা পড়ে, হৃদয়ও বাঁধা পড়ে সুতো, সম্পর্কের উষ্ণতা ছড়ায় চারপাশে। কিন্তু ভাবুন, যখন সময় এগোচ্ছে, প্রযুক্তি প্রতিটি অনুভূতিতে ছোঁয়া দিচ্ছে, তখন কি এই প্রথার স্পর্শও একই উষ্ণতা বহন করবে? আজকের ভাইফোঁটা শুধু রঙ, ধ্বনি বা স্পর্শ নয়- এটি হতে পারে স্মৃতি, কোড আর ডিজিটালের এক নতুন মিলন।
আরও পড়ুনঃ ভারত-মার্কিন কূটনীতিতে তেলের উষ্ণতা; ট্রাম্পের দাবি বনাম মোদির নীরবতা
প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে, যখন মানবিক সম্পর্ককেও ছাপ ফেলছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তখন এমনই প্রশ্ন ওঠে। ভবিষ্যতে এমন অনুভূতির উৎসবগুলো কি এখনকার মতোই থাকবে? মানুষের সম্পর্ক, আবেগ আর ভালবাসা কি প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই উষ্ণতা ধরে রাখতে পারবে? নাকি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নতুন রূপ নেবে এই উৎসব?
কল্পনা করা যাক এমন এক ভবিষ্যতের, যেখানে প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের কণ্ঠস্বর, আচরণ ও স্মৃতি ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব । সেই তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা যায় এক ‘ডিজিটাল সত্তা’- একটি ভার্চুয়াল AI, যা হারিয়ে যাওয়া বা দূরে থাকা ভাই-বোনের মতোই কথা বলে, আচরণ করে।
ধরে নিন, যারা পরিবার থেকে দূরে থাকেন, বোন বা দিদি থাকেন দূরে কিংবা প্রয়াত, তাঁদের জন্য এই প্রযুক্তি আশীর্বাদের সমান। ভাইফোঁটার দিনে ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে বসলেন, আর তাঁর সামনে উপস্থিত হল হোলোগ্রাফিক ‘বোন’। সেই AI বোন আবেগভরা কণ্ঠে বলে উঠল, ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা…’। ভবিষ্যতে হয়তো ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি আর হ্যাপটিক প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ফোঁটার স্পর্শও অনুভব করা যাবে- যেন সত্যিই কেউ পাশে আছে।
এই অভিজ্ঞতা নিছক প্রযুক্তিগত খেলা নয়। বরং এটি ভবিষ্যতের সমাজে একাকীত্ব ঘোচানোর, হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোকে কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়ার এক নতুন পথ হতে পারে। অনেকের কাছেই এটি হতে পারে মানসিক শান্তির একটি মাধ্যম- বিশেষ করে যাঁরা ভাই বা বোনকে হারিয়েছেন, বা যাঁদের জীবনে এমন সম্পর্কের অস্তিত্বই নেই।
আরও পড়ুনঃ রেকর্ড দেশি মদের চাহিদা! মেদিনীপুরে ৭ কোটির বেশি মদ-বিয়ার বিক্রি
তবে এর সঙ্গে কিছু প্রশ্নও জড়িয়ে আছে। অনুভব কি কেবল প্রযুক্তির মাধ্যমে বোঝা সম্ভব? AI-generated আবেগ কি সত্যিকারের সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে?
সে তর্ক থাকবেই। তবে সব মিলিয়ে, এটাই হতে পারে আগামী দিনের ভাইফোঁটা- যেখানে ‘স্মৃতি’ আর ‘কোড’-এর মিশেলে তৈরি হবে এক নতুন অনুভবের পরশ। ভবিষ্যতের ভাইফোঁটা হবে স্মৃতি ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন, যেখানে হারিয়ে যাওয়া হাসি, চোখের জল, কণ্ঠের উষ্ণতা আবার জীবন্ত হবে। প্রথা আর AI হাত ধরাধরি করবে, সম্পর্কের স্পর্শকে আমরা নতুন রূপে অনুভব করব। একদিন ভাইফোঁটায় কপালে ফোঁটা পড়লেই মনে হবে- ‘স্মৃতি’ আর ‘কোড’ মিলে তৈরি করেছে এক নতুন আবেগের পরশ।





