‘ভক্তের ভক্তি’ই সব। নৈহাটির বড়মার কাছে বলি দেওয়ার জন্য রাখা পায়রাদের উড়িয়ে সেই বার্তাই দিল নৈহাটি বড়কালী পুজো সমিতি ট্রাস্ট। রীতি মেনে শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে বড়মার বিসর্জনের পুজো শুরু হয়। তার আগে থেকেই হাজারের বেশি পুলিশ, বম্ব স্কোয়াডের লাগাতার চেকিং, তিনশোর বেশি স্বেচ্ছাসেবকের উপস্থিতিতে নৈহাটির অরবিন্দ রোডের জায়গায় জায়গায় ব্যারিকেড করে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ বড় উদ্যোগ কেন্দ্রের! ওলা-উবেরের দাদাগিরি শেষ করতে রাস্তায় নামছে ভারত ট্যাক্সি
বিসর্জনের সময় গঙ্গাতেও ড্রোন দিয়ে চলে নজরদারি। নিরাপত্তার কারণে বিসর্জনের সময়ে ঘাটে বন্ধ রাখা হয়েছিল ফেরি চলাচল। নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের এত কড়াকড়ির জেরে প্রচুর ভিড়ের মাঝেও নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হল নৈহাটির বড়মার নিরঞ্জন পর্ব।
বিসর্জনের দিন নৈহাটির দীর্ঘদেহী, ঘন কৃষ্ণবর্ণের বড়মাকে দর্শন করতে ভক্তের ভিড় যেন আরও বেশি ছিল। মন্দিরেই শুধু নয়, বিসর্জনের শোভাযাত্রায়ও তাঁরা অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমে দধিকর্মা বিলি হয় ভক্তদের মধ্যে। তারপর দুপুর আড়াইটে নাগাদ দেবীর সোনা-রূপোর গয়না খুলে ফুলের সাজ শুরু হয়। তখন অরবিন্দ রোডের গঙ্গার ঘাট থেকে নৈহাটি রেল স্টেশন পর্যন্ত তিল ধারণের জায়গা ছিল না। তবে বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মুরলিধর শর্মা, ডিসি (নর্থ) গণেশ বিশ্বাস, বড়কালী পুজো সমিটির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য, নৈহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে সবটাই সুষ্ঠভাবে সামলানো সম্ভব হয়।
আরও পড়ুনঃ বাপহারা শিশু, এক ছোট ছেলের প্রতিমা! সুন্দরবনের রক্ষক বনবিবি
দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ পুজো সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য মাকে বরণ করেন। তখন থেকেই গঙ্গার দিকে বড়মার যাত্রাপথ ফাঁকা করতে শুরু করে পুলিশ। রাস্তার দু’দিকে ব্যারিকেড করা হয়। প্রতিমা নিরঞ্জন দেখতে গঙ্গায় নৌকা নিয়েও হাজির হয়েছিলেন অগণিত ভক্ত। প্রথা মেনে ঠিক বিকেল ৪টে ২০ নাগাদ নৈহাটিতে সবার আগে বড়মার দড়িতে টান পড়ে। তখন রাস্তার দু’পাশে থাকা সব বাড়ির ছাদে ভিড়। বিদায়বেলায় সেই ভিড় থেকেই ভক্তরা পুষ্পবৃষ্টি শুরু করেন। সঙ্গে শুরু হয় বাতাসা বিলি। সেই ফুল বিছানো রাস্তা দিয়েই গঙ্গায় রাজবেশে যখন বড়মার নিরঞ্জন হচ্ছে তখন ভক্তদের মুখে উচ্চারিত ‘জয় বড়মা’ ও ‘ধর্ম যার যার, বড়মা সবার’ ধ্বনি মন্ত্রের মত আকাশে বাতাসে মিশে যেন পবিত্রতার ভরিয়ে দেয় সর্বত্র।
নিরঞ্জনের আগে নৈহাটিতে ‘বড়মা ফেরিঘাট’ থেকে মুক্ত করা হয় বলির ১১টি পায়রাকে। এই প্রসঙ্গে বড়কালী পুজো সমিতির সম্পাদক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, “পুজোর আগের দিনও বলির জন্য জোড়া পাঁঠা দেওয়া হয়েছিল। সেটাও আমরা ছেড়ে দিয়েছি। এদিন পায়রাদেরও মুক্ত করা হল। এবছরের পুজোয় নিরঞ্জনের দিন পর্যন্ত লক্ষাধিক ভক্ত দণ্ডি কেটেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষের বেশি ভক্তের সমাগম হয়েছে।”





