শুভজিৎ মিত্র,কলকাতাঃ
চাঁদের গায়ে চাঁদ লেগেছে। পৃথিবীর দ্বিতীয় চাঁদের অস্তিত্ব স্বীকার করল NASA।মেরেকেটে ১৮ মিটারের কিছু বেশি চওড়া। একনজরে দেখে মনে হবে বড়সড় পাথরের টুকরো। সময়ে সময়ে আমাদের মাটি থেকে মাত্র আড়াই মাইল উপর দিয়েও উড়ে যায় এই কোয়াসি মুন। পোশাকি নাম 2025 PN 7।
আরও পড়ুনঃ বাড়বে আরও শক্তি! ১৩ কিমি বেগে ধেয়ে যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, বিশাখাপত্তনমের কাছে চলে এল
নতুন সঙ্গীকে পেল পৃথিবী
পৃথিবীর আকাশে এখন নতুন এক মহাজাগতিক সঙ্গী। এটি আমাদের পরিচিত চাঁদের মতো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা সত্যিকারের উপগ্রহ না হলেও, এটি প্রায় ৬০ বছর ধরে পৃথিবীর সঙ্গে একই পথে পরিক্রমা করবে। বিজ্ঞানীরা এই ক্ষুদ্র গ্রহাণুটির নাম দিয়েছেন ২০২৫ পিএন৭ (2025 PN7), যা এখন পৃথিবীর একটি ‘কোয়াজি-মুন’ (Quasi-Moon) বা ছদ্ম-উপগ্রহ হিসেবে পরিচিত। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ২০৮৩ সাল পর্যন্ত এটি আমাদের গ্রহের অতি নিকটবর্তী সহযাত্রী থাকবে। এই আবিষ্কার আমাদের সৌরজগতের গতিশীলতা সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে।
নেপথ্যে হাওয়াইয়ের চোখ
এই পাথুরে বস্তুটি প্রথম নজরে আসে চলতি বছরের ২ আগস্ট। হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে অবস্থিত হালেয়াকালা অবজারভেটরিতে প্যান-স্টারস ওয়ান টেলিস্কোপের মাধ্যমেই এটি শনাক্ত হয়। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এটিকে সাধারণ একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু ভাবা হলেও, পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা এর কক্ষপথ বিশ্লেষণ করে বিস্মিত হন। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন, বস্তুটি সূর্যের চারপাশে প্রায় পৃথিবীর সমান কক্ষপথে ঘুরছে (১:১ অরবিটাল রেজোন্যান্স), যে কারণে পৃথিবী থেকে দেখলে এটিকে আমাদের গ্রহকে প্রদক্ষিণ করছে বলে মনে হয়। এ কারণেই এটি কোয়াজি-স্যাটেলাইট বা কোয়াজি-মুন হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ হয়েছে।
অদৃশ্য সহযাত্রীর আকার ও বৈশিষ্ট্য
বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন, ২০২৫ পিএন৭-এর ব্যাস প্রায় ১৯ মিটার (৬২ ফুট), যা একটি বড় বাসের আকারের কাছাকাছি। এটি আকারে ছোট হওয়ায় এবং প্রচণ্ড অনুজ্জ্বল (Magnitude প্রায় ২৬) হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এটি মানব দৃষ্টির আড়ালে ছিল। গবেষণায় জানা যায়, এই কোয়াজি-মুনটি সম্ভবত ১৯৫০-এর দশক থেকেই পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথে অবস্থান করছে। এটি ‘অর্জুনা অ্যাস্টেরয়েড’ (Arjuna Asteroid) নামক এক বিশেষ শ্রেণির গ্রহাণুর অন্তর্গত, যাদের কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
আরও পড়ুনঃ কেরিয়ারে বড় উন্নতি, আচমকা অর্থলাভ, শুক্লা ষষ্ঠীতে ভাগ্য প্রসন্ন হবে এই চার রাশির
কোয়াজি-মুন ও প্রকৃত চাঁদের পার্থক্য
২০২৫ পিএন৭ সত্যিকারের চাঁদ না হওয়ার মূল কারণ হলো, এটি সরাসরি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে আবদ্ধ নয়। বরং এটি সূর্যের চারপাশে ঘুরতে গিয়ে এমন একটি পথ অনুসরণ করে, যার ফলে পৃথিবী এবং এটি একই গতিতে চলে। এই বস্তুটি কখনওই পৃথিবীর প্রকৃত উপগ্রহের (চাঁদ) চেয়ে অন্তত দশ গুণ বেশি দূরত্বের কমে আসে না। জানা যায়, এর নিকটতম দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় ৪ মিলিয়ন কিলোমিটার, যেখানে চাঁদ থাকে মাত্র প্রায় ৩৮৪,৪০০ কিলোমিটার দূরে। এই বিশাল দূরত্বের কারণে পৃথিবীর জোয়ার-ভাটার উপর এর কোনো প্রভাব নেই।
কোয়াজি-স্যাটেলাইটদের পরিবার
২০২৫ পিএন৭ এই ধরনের প্রথম আবিষ্কৃত বস্তু নয়। এর আগে বিজ্ঞানীরা 2016 HO3 (কামু’ওলেওয়া) এবং 2023 FW13 সহ আরও কয়েকটি কোয়াজি-স্যাটেলাইট চিহ্নিত করেছেন। তবে এদের মধ্যে অনেকেই ক্ষণস্থায়ী ছিল। কিন্তু ২০২৫ পিএন৭ তার ব্যতিক্রমী দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য উল্লেখযোগ্য। এটি অন্তত ছয় দশক ধরে পৃথিবীর কক্ষপথের সঙ্গে এমন নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছে, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এক বিরল সুযোগ।
২০৮৩ সালের পর এই গ্রহাণুটি ধীরে ধীরে পৃথিবীর কাছ থেকে দূরে সরে যাবে এবং নিজস্ব কক্ষপথে সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকবে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এখন এই ক্ষণস্থায়ী মহাজাগতিক সঙ্গীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই ধরনের বস্তুগুলির গতিপথ, উৎপত্তি ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিয়ে গবেষণা নিকট-পৃথিবীস্থ গ্রহাণুদের (Near-Earth Asteroids) গতিপথ এবং তাদের জন্মস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদানে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই আবিষ্কার আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশীর জটিল এবং পরিবর্তনশীল প্রকৃতি বুঝতে সহায়ক হবে।





