পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কাজ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করবেন বুথ লেভেল অফিসাররা। আর ঠিক এই দিনই কলকাতার রাস্তায় নামতে চলেছে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। প্রতিবাদে, প্রতীকী বার্তায় এবং সাংবিধানিক আবেগে ভর করে মিছিল করবেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কোন পথে এই মিছিল হবে, ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ রেড রোডে বি আর অম্বেদকরের মূর্তির সামনে থেকে মিছিল শুরু হবে। এরপর রানি রাসমণি রোড ধরে গিয়ে কে সি দাস মোড় হয়ে মিছিল পৌঁছবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। অম্বেদকর ও রবীন্দ্রনাথের নামের সঙ্গে মিছিলের সূচনা ও সমাপ্তি স্থল যুক্ত করে তৃণমূল স্পষ্টতই সাংবিধানিক মূল্যবোধ এবং বাঙালিয়ানার প্রতীক হিসেবে বিষয়টিকে তুলে ধরতে চাইছে।
আরও পড়ুনঃ অভিযোগ মারধরের! ছাত্রের ‘রহস্যমৃত্যুর’ ঘটনায় গ্রেফতার পুরুলিয়ার তৃণমূল নেতা জগন্নাথ মাহাতো
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা ছিল ২ নভেম্বর শহিদ মিনারে কেন্দ্রীয় সমাবেশ করার। কিন্তু ওই দিন জায়গা না পাওয়ায় সেই কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে SIR শুরু হওয়ার দিনটিকে হাতছাড়া করতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই মিছিলের মাধ্যমে রাজনৈতিক বার্তা দিতে চলেছে দল।
অন্যদিকে, একই দিনই উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়ায় ‘অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার’ দাবিতে মিছিল করবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই আগরপাড়াই কয়েক দিন আগে অভিষেক গিয়েছিলেন আত্মঘাতী প্রদীপ করের বাড়িতে, যিনি ‘এনআরসি আতঙ্কে’ আত্মহত্যা করেছিলেন বলে দাবি তৃণমূলের। ফলে, মঙ্গলবার কার্যত রাজ্যের দুই প্রধান রাজনৈতিক শক্তি মুখোমুখি পথে নামতে চলেছে— একজন অনুপ্রবেশ বিরোধিতায়, অন্যজন সংবিধান ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে।
আরও পরুনঃ আজ থেকেই বাড়ি বাড়ি শুরু SIR কাজ, আতঙ্কিত হওয়ার প্রশ্নই নেই
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের তথ্য যাচাই করবেন বুথ লেভেল অফিসাররা। নতুন নাম সংযোজন, ঠিকানা সংশোধন কিংবা মৃত ভোটারের নাম বাদ – সব ক্ষেত্রেই তাঁদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিএলও-রা তো তথ্য যাচাই করবেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ ‘আসল’ বিএলও যাচাই করবেন কীভাবে? তার জন্য রয়েছে সহজ উপায়। জাতীয় নির্বাচন কমিশন কোনও রকম বিভ্রান্তি বা হয়রানি যাতে না হয়, তার জন্য পরিষ্কার নির্দেশিকা দিয়েছে।
‘আসল’ বিএলও চিনবেন কীভাবে?
কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকৃত বিএলও চেনার তিনটি স্পষ্ট চিহ্ন থাকবে।
১) সরকারি পরিচয়পত্র – কমিশন-প্রদত্ত আইডি কার্ড থাকবে, যাতে থাকবে কিউআর কোড। স্ক্যান করলে দেখা যাবে অফিসারের নাম, ফোন নম্বর ও বুথ সংক্রান্ত তথ্য।
২) এসআইআর কিট ব্যাগ ও নথিপত্র – বিএলওদের হাতে থাকবে বিশেষ কিট ব্যাগ, ছাপানো এনুমারেশন ফর্ম ও অন্যান্য নথি।
৩) সরকারি টুপি – কমিশনের দেওয়া বিশেষ ক্যাপ পরে থাকবেন তাঁরা।
পাশাপাশি, কমিশনের অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে নিজের এলাকার বিএলও সম্পর্কে তথ্য যাচাই করা যাবে। সেখানে রয়েছে ‘Book a Call with BLO’ এবং ‘Connect with Election Officials’’ – এই দুটি বিকল্প।
কতজন বিএলও কাজ করবেন?
রাজ্যজুড়ে মোট ৮০ হাজার ৬৮১ জন বিএলও মাঠে নামছেন। সঙ্গে থাকবেন অতিরিক্ত ১৪ হাজার কর্মী। ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্র মিলিয়ে ভোটারদের হাতে পৌঁছবে ৭ কোটি ৬৬ লক্ষের বেশি ফর্ম – যার দ্বিগুণ সংখ্যায় ফর্ম ছাপানো হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিটি বাড়িতে অন্তত একাধিকবার যাবেন বিএলও। হাতে থাকবে এনুমারেশন ফর্ম, যা পূরণ করাতে হবে ভোটারদের। কেউ বাড়িতে না থাকলে চিন্তার কারণ নেই—প্রয়োজনে তিন-চার বার পর্যন্ত ফেরত আসবেন তাঁরা।
এসআইআর চলাকালীন ভোটারদের কাছে স্পষ্ট বার্তা – কোনও সন্দেহ হলে তথ্য মিলিয়ে নিন, অফিসারের পরিচয় যাচাই করুন এবং ভুয়ো ব্যক্তির দেখা মিললে সঙ্গে সঙ্গে কমিশনে জানান। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় সতর্ক থাকাই প্রধান লক্ষ্য।





