শিবনাথ প্রধান, সাঁতরাগাছি, হাওড়াঃ
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, গ্রিন হাউস গ্যাস মিলে যে বিষ-বাষ্প তৈরি করছে, তার প্রভাব মারাত্মকই নয় রীতিমতো প্রাণঘাতী।
বাতাসে ধূলিকণা বৃদ্ধির সাথে সাথে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি হতে থেকে । ফলে আদ্রতা জনিত সমস্যা এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির পরেও অনিয়মিত বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২/১৮ কিলোমিটার (০ থেকে ৭/৯ মাইল) স্তর ট্রপোমণ্ডল, যার তাপমাত্রা রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে । এর মূল কারণ দূষণ।
আরও পড়ুনঃ ভারত মহাসাগরীয় তলদেশে রয়েছে,”বদলে দেওয়ার শক্তি”! কী সে শক্তি?
পৃথিবীর প্রতি ১০ জনে ১ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন বায়ু দূষণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা পার্টিকুলেট ম্যাটার আজকের দিনে পরিবেশের উপর কি ভয়ঙ্কর প্রভাব বৃদ্ধি হয়েছে তার দিকে নজর দিলে আতঙ্কিত হতে হয়। নিম্নের হিসাব হাওড়া শহরের:
* ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস ৩১ তারিখ রাত ১২ টা – বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা পার্টিকুলেট ম্যাটার (PM) ৪২৫ µg/m3
* ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি ২০ তারিখ – ৩৭৩ µg/m3
* ২০২৫ সালের জানুয়ারী ৩১ তারিখ – ৪৩২ µg/m3
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা বা পার্টিকুলেট ম্যাটার ১০ ও ২.৫ -এর পরিমাণ মাত্রা যথাক্রমে ১০০µg/m3 ও ৬০ µg/m3 প্রতি ঘনমিটার হলে তা সহনক্ষমতার মধ্যে৷
পার্টিকুলেট ম্যাটার হলো বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকা কঠিন বা তরল পদার্থের (যেমন: রোড ডাস্ট, ফ্লাই ডাস্ট প্রভৃতির) মাইক্রোস্কোপিক কণা। এসব পার্টিকুলেট ম্যাটার শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই সৃষ্টি হয় না। মানব সৃষ্ট কিছু কার্যক্রম এর জন্য দায়ী। যেমন: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার, ইটভাটা ও কলকারখানা ধোঁয়া, গৃহস্থালীর বিভিন্ন কার্যক্রম ও বিল্ডিং কন্সট্রাকশনের ফলে সৃষ্ট ক্ষুদ্র ধাতব কণা প্রভৃতি।
পার্টিকুলেট ম্যাটার খুব সহজেই সূর্যের তাপে গরম হতে থাকে ফলে বায়ুমণ্ডলের ট্রপোমণ্ডল স্তরে উপস্থিতির কারণে গরম ধরে রাখতে সক্ষম হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য। এমনকি শীতল অঞ্চলেও উষ্ণায়নের প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুনঃ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছেন বিএলওরা! অনলাইন ফর্ম ফিল-আপ এখনই করা যাবে না
কি হতে পারে বা কি হতে চলেছে আগামী দিনে:
* পার্টিকুলেট ম্যাটারের মাত্রাতিক্ত উপস্থিতির কারণে বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশেষ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের রোগের আশঙ্কা। এই বস্তুকণাগুলো এতই ক্ষুদ্র যে তা মানুষের শ্বাসনালিতে ডিফিউসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে পৌঁছে গিয়ে হার্টের ব্লক, মস্তিষ্কে স্ট্রোক, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
* শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম ২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। বায়ুমণ্ডলে ওই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা (পিএম)-গুলি খুব সহজে মিশে যেতে পারে। কিন্তু যদি পিএম কণাগুলির ব্যাস বেশি হয় তাহলে বায়ুমণ্ডলে মিশে যেতে সময় লাগে বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র, গাড়ি, ট্রাক, অগ্নিকাণ্ড, ফসল পোড়ানো ও কারখানার চিমনি থেকে এই দূষণ-কণাগুলি বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে বাতাসের ধূলিকণাকে আশ্রয় করে বিষ-বাস্প তৈরি করে। এই বিষাক্ত বাতাস ক্রমাগত শরীরে ঢুকতে থাকলে তা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। দুর্বল হয়ে যেতে থাকে নার্ভ। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ধীরে ধীরে ব্যাহত হতে থাকে। ফলে নানা দুরারোগ্য স্নায়ুর রোগ বাসা বাঁধে শরীরে।
স্নায়ুর রোগ বাড়ছে বিশ্বজুড়েই। গত ৩০ বছরে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর রোগ অনেক বেড়েছে। গবেষণা বলছে, এর অন্যতম কারণ বায়ুদূষণ। পার্কিনসন্স এক ধরনের স্নায়ুর অসুখ। প্রাথমিক ভাবে ওষুধের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাধারণত এই রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে হাত-পায়ে অনিচ্ছাকৃত কম্পন দেখা দেওয়া, হাঁটাচলা শ্লথ হয়ে যাওয়া, পেশি ক্রমশ শক্ত হয়ে আসা, কথা বলার সময় কথা জড়িয়ে যাওয়া, এসবই হল পার্কিনসন্সের উপসর্গ।
শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা থেকে ক্যানসার, হার্টের রোগ, বহু প্রাণঘাতী অসুস্থতার জন্য বায়ুদূষণ প্রত্যক্ষ ভাবে দায়ী। নতুন গবেষণা বলছে, বায়ু দূষণের কারণে মানসিক ব্যধিও বাড়ছে। অবসাদ, ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ, অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের বাড়াবাড়ির পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বায়ু দূষণই দায়ী। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, গ্রিন হাউস গ্যাস মিলে যে বিষ-বাষ্প তৈরি করছে, তার প্রভাব মারাত্মকই নয় রীতিমতো প্রাণঘাতী।
* বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণে সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়ে পরিবেশের উপর । এর আগে অনেক গুলো লেখায় উল্লেখ করেছি বর্তমান পরিস্থিতিতে বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালী আচরণ কেমন থাকতে পারে। দাবানল সহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ আমাদের আগামীদিনের ভবিষ্যত।
একটা কথা খুব পরিষ্কার, আমরা নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুর পথ প্রশস্থ করছি ।





