শিবনাথ প্রধান, সাঁতরাগাছি, হাওড়াঃ
মহাকাশে নয়, বরং মহাকাশযানের ‘শ্মশান’ রয়েছে পৃথিবীর বুকেই। স্থলভাগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এই জায়গায় রয়েছে গভীর সমুদ্র। ঠিকানাহীন এই জায়গাটির নাম ‘পয়েন্ট নিমো’। কোনও দেশের অংশ না হওয়ায় এখানে কোনও আইনের প্রচলনও নেই। পৃথিবীর প্রত্যন্ত এই অঞ্চল ভৌগোলিক দিক থেকে এতটাই দুর্গম, মানুষেরও আনাগোনা নেই। থাকবেই বা কী করে। হাত বাড়ালেই যে মহাকাশ! দিনের ভরা আলোতেও এখানে বিরাজ করে শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা।
আরও পড়ুনঃ শিলিগুড়ির বাজারে দাম বাড়ছে সবজি-ফুলের; নাভিশ্বাস মানুষের, উধাও টাস্ক ফোর্স
ভৌগোলিকরা বলেন, ‘পয়েন্ট অফ নিমো।’ ল্যাতিনে ‘নিমো’র অর্থ ‘একজনও নয়’। জনমানবশূন্য বলেই হয়তো এমন নামকরণ। আর একটি নামও আছে। ‘অগম্য মহাসাগরীয় মেরু ‘। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ অঞ্চলটিকে NASA-র দৌলতে অনেকেই জানেন। কারণ, এই ‘পয়েন্ট অফ নিমো’তেই শায়িত নাসার অনেক মহাকাশযান।
হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই জায়গাটি মহাকাশযানের কবরক্ষেত্র। পৃথিবী থেকে ৩৬০ কিলোমিটার উপরে, যেখানে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি রয়েছে, সেখান থেকে সবচেয়ে কাছে পৃথিবীর এই নিমো অঞ্চল। মহাকাশযানের কর্মক্ষমতা ফুরিয়ে আসার সময় হলে, বা বিগড়োলে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে, সোজা এই নিমোতেই পাঠানো হয়। ছোটখাটো মহাকাশযান হলে, পৃথিবীতে ফিরে আসার আগেই ধূলিস্যাত্ হয়ে যায়। কিন্তু, মহাকাশযান বড় হলে, সাবধানতার সঙ্গে এই নিমোতেই চিরনিদ্রায় পাঠানো হয়। স্পেস জাঙ্ক এখানে ডাম্প করা শুরু হয়েছিল প্রায় ১৯৭১ সালে এবং তখন থেকেই এটি ক্র্যাশ ল্যান্ডিং স্পেস জাঙ্কের প্রধান অবস্থান।
পয়েন্ট নিমোতে মহাকাশ কবরস্থানে নিষ্পত্তি করা বৃহত্তম বস্তুগুলির মধ্যে একটি ছিল রাশিয়ান মহাকাশ স্টেশন মির, যা ২৩ মার্চ ২০০১-এ বিধ্বস্ত হয়েছিল।
পয়েন্ট নিমোতে নিষ্পত্তি করা আরেকটি উল্লেখযোগ্য বস্তু ছিল তিয়ানগং-১। এটি ছিল প্রথম চীনা মহাকাশ স্টেশন। ২০১১ সালে ৮.৫ টন ওজনের মহাকাশ যান সফলভাবে উৎক্ষেপণের পর, চীন প্রায় ৪ বছর পরে ২০১৬ সালে স্টেশনটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। মহাকাশ স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার জন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করার পরও উপায় না পেয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে মহাকাশ কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।





