“নীরব পৃথিবী চায়”
সৌমেন মুখোপাধ্যায়
হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বিকাল পাঁচটা। নরেনের মন আর সই না। যেমন করেই হোক তাকে ঘরে পৌঁছাতেই হবে। মায়ের শরীর নিয়ে তার চিন্তা। হাঁটবার সে মনস্থির করে। বেঞ্চ থেকে উঠে হাঁটবার জন্য পা বাড়িয়ে দেয়। এমনসময় একটা ট্যাক্সি তার সামনে এসে হঠাৎ স্পিড কমিয়ে দেয়। একবার ভাবে চাপবে আর একবার না। পকেটে হাত চালিয়ে দেখে পকেটে মাত্র দশ টাকা পড়ে আছে। কিছু না ভেবে চাপতে যাবে এমনসময় ট্যাক্সিটা হুশ করে ছেড়ে দিয়ে তার চোখের সামনে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। আশাহীন হয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকে।
“এই যে দাদা, ক’টা বাজজে বলতে পারেন?”
“পাঁচটা “।
“ধন্যবাদ”, এই বলে বেঞ্চের উপর বসে পায়ের উপর পা দুলিয়ে মুখে একটা সিগারেট পুরে আবার নরেনকে জিজ্ঞেস করেন, “এই যে দাদা, আপনার কাছে লাইটার বা দেশলাই হবে?”
“না, কি করবেন লাইটার নিয়ে?”
“মানে সিগারেট ধরাতাম আর কি।”
আরও পড়ুন: Purulia: জোশ একাডেমির পক্ষ থেকে সম্বর্ধনা সভা
“সিগারেট! ঐ তো ঐ……….” হাত বাড়িয়ে নরেন একটা দোকান দেখিয়ে বলে, “ঐখানে চলে যান, ঐখানে লাইটার- দেশলাই সবই পাবেন। যত খুশি সিগারেট খেতে পারবেন। ”
নরেন রেগে গেছে দেখে ভদ্রলোক মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। তারপর বেঞ্চ থেকে উঠে দোকানের দিকে ভদ্রলোক হাঁটতে থাকেন।
কিছুক্ষণ পর আবার একটা ট্যাক্সি নরেনের সামনে এসে দাঁড়ায়। এবারও নরেন ভাবতে থাকে চাপব কি চাপব না। কিন্তু পকেটের সম্বল দশ টাকা তাকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে যায়। ট্যাক্সিটা সঙ্গে সঙ্গে তার গতি বাড়িয়ে চলে যায়।
“এই যে দাদা, ক’টা বাজে বলতে পারেন?” একটা সুমধুর মেয়েলি গলা শুনে নরেন চমকে যায়। পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে রূপলাবণ্যময়ী কোন স্বর্গের রাজকন্যা তার কাছ থেকে সময় জানতে চায়। তার পোশাকের দিকে তাকিয়ে নরেন নিজেকে লজ্জিত বোধ করতে থাকে। কোনরকমে নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, “সাড়ে পাঁচটা।”
“ধন্যবাদ ।” এই বলে চারদিকে একবার তাকিয়ে ভদ্রমহিলাটি আবার জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা, বলতে পারেন, এখানে যে ভদ্রলোক এসেছিলেন তিনি কোনদিকে গেছেন?”
‘ভদ্রলোক’ কথাটা নরেনকে বেশ ভাবিয়ে তোলে। কোন ভদ্রলোকের কথা বলছেন কে জানে। তাই তাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কোন ভদ্রলোকের কথা বলছেন?”
ভদ্রলোক বলতে বুঝতে পারছে না দেখে ভদ্রমহিলাটি বলেন,”যে ভদ্রলোক একটু আগে একটা ট্যাক্সি থেকে এখানে নেমেছিলেন তার কথা বলছি।”
“ওঃ,” এবার নরেনের মাথায় ব্যাপারটা ঢুকে যায়। তাই কেন ট্যাক্সিটা তাকে না চাপিয়ে অত দ্রুতগতিতে চলে যায়। আবার ভদ্রলোকটিই বা কি করে এখানে এসেছিলেন।
“আচ্ছা, আপনি কি এই ট্যাক্সিতে এলেন?”
আরও পড়ুন: Ram Mandir at Murshidabad: হয়ে গেল বড় ঘোষণা, বাংলার বুকে রাম মন্দির!
“হাঁ, কেন বলুন তো?”
“না, মানে আপনি যাকে খুঁজছেন উনি দেখুন ঐ সামনের দোকানে বসে সিগারেট ফুঁকছেন। ”
“সিগারেট ফুঁকছেন?”
“হাঁ।”
“ঠিক আছে, ধন্যবাদ। ” কথাটা বলে রাগে গজগজ করতে করতে সামনের দোকানের দিকে ভদ্রমহিলাটি পা বাড়ালেন।