Wednesday, 15 October, 2025
15 October
Homeউত্তরবঙ্গCooch Behar: ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কাঞ্চনের কুকীর্তি! সমবায় ব্যাংকে হাপিস ৪৭ লক্ষ

Cooch Behar: ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কাঞ্চনের কুকীর্তি! সমবায় ব্যাংকে হাপিস ৪৭ লক্ষ

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকের বোর্ডের বিরুদ্ধে।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

সোমেন দত্ত, কোচবিহারঃ

তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার সমবায় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাংকে বড়সড়ো দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হল। ব্যাংকে বসেই প্রতারণার ফাঁদ পেতে গ্রাহকদের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কাঞ্চন নিয়োগী। কখনও ভুয়ো স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে সেই গোষ্ঠীর নামে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, কখনও ভুয়ো ক্যাশ সার্টিফিকেট দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া, কখনও গ্রাহকের টাকা ব্যাংকের তহবিলে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে ঢোকানো, এভাবেই নানা কায়দায় দীর্ঘদিন থেকে দু’হাতে টাকা লুটেছেন কাঞ্চন। প্রাথমিক তদন্তে শুধু হলদিবাড়ি ও জামালদহ শাখাতেই দুর্নীতির অঙ্ক ৪৭ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত হলে টাকার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেই মনে করছেন ব্যাংকের আধিকারিক এবং বোর্ড সদস্যদের একাংশ। দুই শাখা থেকে বহু নথিপত্র গায়েব হয়ে গিয়েছে বলেই জানিয়েছেন ব্যাংক কর্তারা। এতসবের পরেও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকের বোর্ডের বিরুদ্ধে।

একটি নির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়েই সামনে আসে কাঞ্চনের কুকীর্তি। তারপরই চলতি বছর ২২ মে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করেন ব্যাংকের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক। ব্যাংকের প্রধান শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অ্যাকাউন্ট) সুরজ ভৌমিক এবং পুণ্ডিবাড়ি শাখার ইনচার্জ দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২ জুলাই কমিটির রিপোর্ট জমা হয়। কীভাবে কাঞ্চন গ্রাহকদের প্রতারিত করেছেন, রিপোর্টে তার বিশদ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কাঞ্চনের ৪৭ লক্ষ ১৩ টাকা আত্মসাতের কথাও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে। দুর্নীতির শেকড় যে অনেক গভীরে তা রিপোর্টে ঘুরিয়ে স্বীকার করা হয়েছে এবং আরও বিস্তারিত তদন্তের প্রয়োজন আছে বলেই জানানো হয়েছে। কীর্তিমান কাঞ্চন প্রতারণার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘আর্থিক সমস্যায় পড়েই বেআইনি কাজ করেছি। যাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছি প্রত্যেকের টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই বোর্ডের কাছে খানিকটা সময় চেয়েছি।’

আরও পড়ুনঃ জাল আধার কার্ড বানিয়ে নেপালে প্রবেশের চেষ্টা! পানিট্যাঙ্কিতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি তরুণ

তদন্ত রিপোর্টের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকেই বেআইনি কারবার শুরু করেছিলেন কাঞ্চন। গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। কাঞ্চনের বাড়ি জামালদহে। এলাকায় তাঁদের পরিবার যথেষ্ট প্রভাবশালী। শুরুতে ব্যাংকের জামালদহ শাখার ম্যানেজার হিসাবে কাজ করতেন তিনি। সেখানেই প্রতারণায় হাত পাকান। পরে তাঁকে হলদিবাড়িতে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়েও বেআইনি কারবার বন্ধ করেননি কাঞ্চন। প্রায় দু’মাস আগে দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট জমা হলেও আজ পর্যন্ত কাঞ্চনের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। লোকদেখানো শোকজ করেই কাজ শেষ করা হয়েছে। উলটে দুর্নীতি ধরা পড়ার পর তাঁকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোচবিহার মূল শাখায় বদলি করা হয়েছে। ব্যাংককর্মীদের ধারণা, মাথার উপর কোনও প্রভাবশালীর হাত না থাকলে এতকিছুর পরও বহালতবিয়তে থাকতেন না ওই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।

ব্যাংকের নির্বাচিত বোর্ড পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে তৃণমূল। ব্যাংকের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মণ্ডল দলের তুফানগঞ্জ-১ ব্লক সভাপতির পদেও রয়েছেন। কেন পদক্ষেপ হচ্ছে না? বোর্ড কী তাহলে দুর্নীতি ধামাচাপা দিতে চাইছে, না কি দুর্নীতিতে বোর্ডের কোনও প্রভাবশালীর হাত রয়েছে? সিদ্ধার্থের কথা, ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজারই দুর্নীতিতে যুক্ত। আমরা চাপ দিয়ে কাঞ্চনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছি। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। তাই এখনও আইনি পদক্ষেপ হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে সব টাকা ফেরত না দিলে পুলিশের দ্বারস্থ হব।’ দুর্নীতি ধরা পড়ার পরও কেন সাসপেন্ড না করে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার মধ্যে রেখে দিয়ে প্রতিমাসে বেতন দেওয়া হচ্ছে অভিযুক্তকে তার কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি চেয়ারম্যান। তবে ব্যাংকের অন্য শাখাগুলিতেও দুর্নীতি হয়েছে কি না তা জানতে বিশেষ তদন্ত শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ বাবার সঙ্গে বচসা, সকালে ঘর থেকে উদ্ধার ছেলের ঝুলন্ত দেহ! চিতা থেকে তুলে ময়নাতদন্তে পাঠাল পুলিশ

ব্যাংকের জামালদহ এলাকার নির্বাচিত ডিরেক্টর বাসন্তী বর্মনও প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তাঁর কথা, ‘প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকের প্রতি ভরসা হারাচ্ছেন গ্রাহকরা। দুর্নীতির বড় প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের ব্যবসায়। অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার। বোর্ডের সভায় সবই বলেছি। তবে আমি একা কিছু করতে পারব না।’ কাঞ্চনের প্রতারণার ফাঁদে পড়েছে হলদিবাড়ির একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী। গোষ্ঠীর সভানেত্রী শকুন্তলা রায়ের প্রশ্ন, ‘যাঁদের কাছে টাকা জমা রাখছি তাঁরাই যদি প্রতারণা করেন তাহলে আমরা যাব কোথায়?’ তাঁর কথা, ‘ব্যাংকের উপর আমাদের আর ভরসা নেই। অভিযুক্তদের শাস্তি না হলে সব গোষ্ঠী একসঙ্গে হয়ে প্রতিবাদে নামব।’

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন