হাঁটু সমান কাদাজল। তার মধ্যেই বাঁশের চাঁদোয়া কাঁধে নিয়ে কয়েকজন গ্রামবাসী এগিয়ে চলেছেন শ্মশানের দিকে। থই থই জল কাদায় রাস্তার চিহ্ন নেই। সেই দৃশ্য মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করেছেন কেউ কেউ। আর সেই ভিডিও এখন ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। আবারও সামনে এল চরম অব্যবস্থার ছবি।
খণ্ডঘোষ ব্লকের গোপালবেড়া পঞ্চায়েতের ইন্দুটি গ্রাম। অভিযোগ, গ্রামের শ্মশান পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার রাস্তার বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিন। জায়গায় জায়গায় জল জমে রয়েছে, কাদা-মাটিতে রীতিমতো পিচ্ছিল পথ। দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
আরও পড়ুনঃ বাড়বে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি! বৃষ্টি বিরতি দক্ষিণবঙ্গে রোদ ঝলমলে আকাশ আজ
টানা বৃষ্টিতে রাস্তার অবস্থা আরও শোচনীয় হয়েছে। গ্রামেরই এক প্রবীণ বাসিন্দার মৃত্যুর পর শনিবার তাঁর দেহ দাহ করা সম্ভব হয়নি রাস্তার জন্য। অবশেষে রবিবার সকালে বাধ্য হয়ে হাঁটু কাদাজল পেরিয়ে শ্মশানযাত্রা। প্রবল কষ্টে দেহ পৌঁছয় শ্মশানে।
এই করুণ চিত্র সামনে আসতেই তীব্র আক্রমণে নামে বিরোধীরা।সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য বিনোদ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেন, “সারাদেশে চলছে কসমেটিক উন্নয়ন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষের মরেও শান্তি নেই। কাদা মাটি ডিঙিয়ে যেমন হাসপাতালে যেতে হয়, তেমনই কাদা পেরিয়ে শ্মশানেও যেতে হচ্ছে। তৃণমূল সরকার শুধু কাটমানি নিয়েই ব্যস্ত!” বিজেপি নেতা মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্রের কথায়, “তৃণমূল দাবি করে নিরানব্বই শতাংশ উন্নয়ন হয়েছে। অথচ বাস্তবে চারপাশে মানুষ চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। রাস্তার যা অবস্থা, তা দেখলেই বোঝা যায় সরকার কতটা উদাসীন। কাটমানি তোলা ছাড়া আর কিছুতে তাঁদের আগ্রহ নেই।”
রাজ্যের শাসকদলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের পাল্টা দাবি, “পুরো বাংলা জুড়েই উন্নয়ন হয়েছে—এটা সিপিএম আর বিজেপি ভালো করেই জানে। আর বিজেপি তো মুখের কথা বলতেই পছন্দ করে। রাস্তাটি জেলাপরিষদের অধীনে পড়ে, দ্রুত তার নির্মাণ হবে।”
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণবঙ্গে বন্যার আশঙ্কা; মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভেও টলল না ডিভিসি, বরং আরও বাড়ল জলছাড়া
এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার আশ্বাস দিয়েছেন, “অবিলম্বে রাস্তাটির সংস্কারের কাজ শুরু হবে। এই দুর্ভোগের অবসান ঘটানোই আমাদের অগ্রাধিকার।” এই বাকযুদ্ধের আবহে কবে প্রশাসনের টনক নড়বে, সেই দিকে তাকিয়ে ইন্দুটি গ্রামের বাসিন্দারা।