সৌমেন মুখোপাধ্যায়
বাঁকুড়া জেলার অতি জনপ্রিয় স্থান সোনামুখী যাকে ভগবান বা ঈশ্বরদের বাসস্থান বলা চলে। বিভিন্ন জাগ্রত দেব-দেবীর জন্য দেশ-বিদেশে সোনামুখীর নাম প্রসিদ্ধ। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য সোনামুখীর মা-ই-ত কালী মা।
অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় তখন বর্গীরা আক্রমণ করে ধন-সম্পদ লুঠ করতে থাকে। এরা ছিল মারাঠী। সাত হাত ছিল লম্বা কম্বল আর বর্শা। ঘোড়ার পিঠে চড়ে তারা আক্রমণ করে লুঠপাট করতে থাকে। যে সময় ঘটনাটি ঘটে তখন বর্গীদের সেনাপতি ছিল ভাস্কর পন্ডিত। ভাস্কর পন্ডিত তার দলবল নিয়ে ঘোড়ায় চেপে বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী আসেন। তার আসার সংবাদ পেয়ে সমস্ত সোনামুখীবাসী দরজায় খিল দিয়ে গৃহবন্দী হয়।
সময়টা ছিল সন্ধ্যা। সমস্ত এলাকা জঙ্গলে ভর্তি। সেই জঙ্গলের মধ্যে ভাস্কর পন্ডিত দেখতে পান হাড়িকাঠে একজন বৃদ্ধ পূজা করছেন। বৃদ্ধকে একা দেখে ভাস্কর পন্ডিত খাড়া তুলে মারতে যায়। তখনই ঘটে যায় অদ্ভুত ঘটনা। খাড়া আর বৃদ্ধের কাছ অবধি পৌঁছায় না। তাই দেখে ভাস্কর পন্ডিত চিৎকার করে গর্জন করে উঠেন, “কে আমার খাড়া পিছন থেকে টেনে রেখেছিস।”
ভাস্কর পণ্ডিতের গর্জন শুনে তার দলের লোকজন উত্তর দেয়, ” না, পিছন থেকে কেউ ধরে রাখেনি।” ভাস্কর পন্ডিত তখন দৃষ্টি শক্তি হারায়।
দৃষ্টিহীন ভাস্কর পন্ডিতকে ছটফট করতে দেখে বৃদ্ধ মন্দিরের ঘটের জল ছিটিয়ে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনেন। তখন ভাস্কর পন্ডিত বৃদ্ধকে প্রণাম করে বলেন, “এখানে কোন দেবতা আছেন ?”
আরও পড়ুন: Shantiniketan: এ বারও ‘খোলামেলা’ নয় বসন্ত উৎসব; সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের
ভাস্কর পন্ডিতের কথা শুনে উত্তরে বৃদ্ধ বলেন, “এই পর্ণকুঠিরে মা কালী থাকেন। ”
ভাস্কর পন্ডিত তখন চিৎকার করে বলেন, “মা-ই-তো কালী”। অবাঙালী ভাস্কর পন্ডিতের উচ্চারণের ফলে সেই থেকে এই মা কালীর নামকরণ হয় “মা-ই-তো কালী”। ভাস্কর পন্ডিত তার নিজের হাতের খাড়া মায়ের চরণে রেখে দেন। ধীরে ধীরে পর্ণকুঠীরে এক মন্দিরে রূপ নেয়। কালীপূজার সময় “মা-ই-তো কালী”র বিশালাকার মূর্তি তৈরী হয়। প্রতিবছর কালীপূজা মহাধূমধামে হয়। ইনি খুব জাগ্রত কালী মা।