দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা। তাঁদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগোয় ‘হে’ মার্কেটের এই ঘটনায় নড়ে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। তারপর থেকেই ১ মে দিনটাকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এই ইতিহাস কি জানেন শিলিগুড়ির, কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করা হাজার হাজার শ্রমিক? তাঁরা কি জানেন প্রত্যেকবছর শ্রমিকদের জন্য এই দিনটায় ছুটি থাকে? এককথায়, না। মে দিবসের তাৎপর্য কী, শিলিগুড়ির শ্রমিকদের এসব চিন্তা করতে গেলে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের আর ভাত জুটবে না, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা।
মে দিবসে বন্ধ থাকে সরকারি অফিস। বহু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ছুটি থাকে। তবে যাঁরা একেবারেই দিন আনা দিন খাওয়া, তাঁদের কিন্তু ছুটি নেই। কাজে না গেলে খাবার জুটবে না। আর পাঁচটা দিনের মতোই বৃহস্পতিবার কেউ রিকশা নিয়ে বেরোবেন তো কেউ মালিক আসার আগেই দোকান খুলতে চলে যাবেন।
আরও পড়ুন: বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের আক্রমণের বিরুদ্ধে মুর্শিদাবাদের সালারে বাংলা পক্ষর সভা
মে দিবসেও রিকশা চালাবেন? প্রশ্ন শুনেই চালক রাজা বললেন, ‘আমি অত কিছু জানি না কী দিবস বা কী রয়েছে। পেট চালাতে গেলে আমায় বেরোতেই হবে।’ শুধু তিনিই নন, শহরে ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যাচ্ছে তাঁরা মে দিবসের ছুটি নিয়ে উদাসীন। কেউ কেউ তো আবার এও বলে দিচ্ছেন, ‘এইসব আবার কী!’ অনেকে হতাশ হয়ে বলছেন, ‘আমাদের কাজ না করে ছুটি কাটালে উলটে কষ্ট। কারণ একদিন কাজ না করলে পরের দিন কী খাব তা নিয়ে চিন্তা হয়।’
বিধান মার্কেটের একটি জুতোর দোকানের কর্মচারী রাকেশ সরকার। তাঁর কথা, ‘আমাদের তো আর অতবড় কোম্পানি নয় যে ছুটি দেবে। দোকান খোলা থাকবে। আমাদেরও আসতে হবে।’ একই কথা শোনা গেল শহরের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুরেশ যাদবের মুখেও। তাঁর বক্তব্য, ‘আমি পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। নিয়ম রক্ষার্থে অফিস ছুটি দিয়েছে। কিন্তু বলেছে, দরকার হলে বাড়ি থেকে একটু কাজ করে দিতে।’
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর সারপ্রাইজ ভিজিটের পরই পার্ক স্ট্রিটের ৬টি রেস্তরাঁ বন্ধ
মে দিবসের মতো যে কোনও দিন এলে তা অর্থহীন বলে মনে করেন রাজমিস্ত্রি ভবেশ রায়। তিনি বলেন, ‘এইসব দিনের আমাদের কাছে কোনও মূল্যই নেই।’ শ্রমিকদের দিনে একটা বড় ভাগের শ্রমিক আসলে কাজ করেন। তাঁদের কোনও ছুটি নেই। মে দিবসের তাৎপর্য বলেও তাঁদের কিছু আর থাকছে কি? আক্ষেপ করা ছাড়া আর উপায় নেই।