কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা কি বাংলার ছেলেরাও পাচ্ছে? রাজ্য প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি বলছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার শুধু মহিলাদের জন্য। অথচ সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তাঁর ছেলের নামে ঢুকছে বলে অভিযোগ করলেন মালদহের কালিয়াচকের এক ব্যক্তি। তাঁর অভিযোগ, টানা প্রায় চার বছর ধরে তাঁর ছেলের নামে ঢুকছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা। আর সেই টাকা একটি চক্রের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন আমানুর রহমান নামে ওই ব্যক্তি। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। এদিকে এই নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল, বিজেপির তরজা।
আরও পড়ুন: তীব্র আপত্তি মমতার; ‘নির্বাচন কমিশনের ডিক্লারেশন ফর্মে জন্মসালের উল্লেখ কেন?’
সরকারি নির্দেশিকাতে উল্লেখ রয়েছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পেতে হলে ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স হতে হবে। তাও আবার মহিলা ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য। আর সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকাই তাঁর ছেলের নামে ঢুকছে বলে দাবি কালিয়াচক ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত যদুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নয়াগ্রামের বাসিন্দা আমানুর রহমানের। তাঁর বক্তব্য, গত বুধবার সকালে প্রতিদিনের মতোই নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে স্ক্রিন স্ক্রল করছিলেন। এর মধ্যেই তিনি তাঁর স্ত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের স্ট্যাটাস চেক করতে যান নিজের মোবাইল দিয়ে। মোবাইল নম্বর দিয়ে স্ট্যাটাস চেক করতেই দুটি নাম দেখা যায় ওই নম্বরে। একটা তাঁর স্ত্রীর, অন্যটি তাঁর ছেলের। বিষয়টি দেখেই তিনি হতবাক হয়ে যান। কারণ তাঁর ছেলে কী করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা পাবে? দ্বিতীয়ত তাঁর ছেলের নামের বানানের আবার সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। শুধুমাত্র একটি অক্ষরের ফারাক। অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরটিও তাঁর ছেলের নয়।
এরপর কৌতূহলবশত বেনিফিশিয়ারি আইডি টুকে আবার কপি পেস্ট করে ডিটেলস চেক করতে গিয়েই লক্ষ্য করেন, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে টাকা তোলা হচ্ছে তাঁর মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে। এছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর ছেলের আধার নম্বরও। এরপরই তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেন। আমানুরের বুঝতে বাকি থাকে না কেউ বা কারা তাঁর ছেলের আধার নম্বর এবং তাঁর নিজের ফোন নম্বর ব্যবহার করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা তুলছে। এরপরই তিনি তার ছেলেকে ডেকে পাঠান। তাঁর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করতে সেও জানায়, এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। এবং কাউকে তার কোনও নথিও সে দেয়নি।
আমানুরের অভিযোগ, কেউ বা কারা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার ফোন নম্বর এবং আমার ছেলের আধার কার্ডের নম্বর হাতিয়ে নিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন করেছে ২০২১ সালে। এরপর থেকে লাগাতার তারা অসাধু উপায় অবলম্বন করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছে। যখন ওই চক্র কালিয়াচক ১ ব্লকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আবেদন জানিয়েছিল, সেই সময় তাঁর ছেলের বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
আমানুরের কথায়, “এই কাজ কোনও অসাধু চক্র করেছে। তাও আবার আমার ছেলের আধার কার্ডে জালিয়াতি করে। আমি এনিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ব্লক অফিস ও কালিয়াচক থানায়। আমি তদন্ত চাইছি।”
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গের জন্য গর্বের মুহূর্ত! আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেল রাজ্য
পুরো ঘটনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক। এই নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপির মালদহ জেলার সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, “তৃণমূলের সর্বত্রই দুর্নীতি। সেটা মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প হলেও দুর্নীতি হচ্ছে। পড়ুয়াদের স্কলারশিপের টাকা নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। এবার একটা ১৯-২০ বছরের ছেলের লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হয়ে গেল। অন্য একজন সেই টাকা তুলছেন। প্রশাসনের কোনও স্তরে ধরা পড়ল না। মুখ্যমন্ত্রী বারবার দুর্নীতিমুক্তের কথা বললেও তাঁর কথায় কেউ কান দিচ্ছেন না।”
পাল্টা বিজেপিকে আক্রমণ করে মালদহ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র আশিস কুন্ডু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পে মহিলারা উপকৃত হচ্ছেন। একটা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে। কেউ দোষী হলে ছাড়া পাবে না। আবার এই প্রকল্পের দুর্নাম করার জন্য কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে, সেও ছাড়া পাবে না।”