কুশল দাসগুপ্ত, শিলিগুড়ি:
কেউ কেউ আছেন দিন বা রাত মানুষের বিপদে পাশে থাকেন। এদেরই একজন রায়গঞ্জের রিঙ্কু তখন প্রায় রাত সাড়ে ৯টা। শেষ পৌষের হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় দেবীনগর থেকে রেল স্টেশনের দিকে ছুটে চলেছে একটি টোটো। চালকের আসনে বছর পঁচিশের রিঙ্কু সাহা। পিছনে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরিন্দম দত্ত। তিনি পৌনে ১০টার রাধিকাপুর এক্সপ্রেস ধরবেন। গন্তব্য কলকাতা। মাঝপথে মনে পড়েছে, তিনি প্রেসারের ওষুধটাই নিতে ভুলে গিয়েছেন। উপায়?
আরও পড়ুন: Siliguri TMC: মহিলাদের কর্মীসভা “দীক্ষা”
মুশকিল আসান করে দেন টোটো চালক রিঙ্কু। টোটো থামিয়ে মোবাইল বের করে দেখে নেন রেলের একটি অ্যাপ। তিনি জানান, ট্রেন স্টেশনে পৌঁছতে নির্দিষ্ট সময়ের থেকেও ২০ মিনিট দেরি করবে। অতএব, টোটো ঘুরিয়ে বাড়ি থেকে প্রেসারের ওষুধ নিয়ে স্টেশনে পৌঁছন অরিন্দম। পরে তিনি বলেছেন, ‘ভাগ্যিস টোটো ছিল। কত সমস্যার সমাধান হয়ে যায় মুহূর্তেই!’
টোটোর বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। যানজট, ভিড়, ছোটখাটো দুর্ঘটনা— এমন অজস্র বিষয়ে কাঠগড়ায় তোলা হয় ব্যাটারিচালিত এই ত্রিচক্রযানকে। চন্দ্রযান অভিযানের সময়ে একটি মিম বেশ ‘ভাইরাল’ হয়েছিল। ব্যঙ্গপ্রিয় কোনও বাঙালি সেই মিম তৈরি করে লিখেছিলেন— চাঁদ থেকে পৃথিবীর একটি ছবি তোলা হয়েছে। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীর তিন ভাগ টোটো আর একভাগ স্থল।
তবে এ সবের বাইরে টোটোর ইতিবাচক ভূমিকাকে অস্বীকার করাও যে বেশ কঠিন তা মানছেন রায়গঞ্জের লোকজন। অরিন্দম বলেন, ‘রাস্তায় যানজটে পড়লে টোটোর উপরেই প্রথম রাগ হয়। কিন্তু এই টোটো না-থাকলে এই বয়সে বাড়িতেই আটকে পড়তাম! পাড়ার টোটোওয়ালার নম্বর আছে। একটা ফোনেই সে হাজির হয়ে যায় বাড়ির দুয়ারেই।’ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নীলাঞ্জনা সরকারের কথায়, ‘আমার বাড়ি শহর থেকে দু’কিলোমিটার দূরে। শহরের ভালো স্কুলে ভর্তি হয়েছি। টোটোকাকুই আমাকে বাড়ি থেকে স্কুলে নিয়ে যায়। আবার ছুটির পরে নিয়ে আসে। এই ব্যবস্থা না-থাকলে আমার শহরের ওই স্কুলে পড়াই হতো না।’
আরও পড়ুন: West Bengal Police Attack: ফের প্রশ্নের মুখে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা! আবারও আক্রান্ত পুলিশ
রায়গঞ্জের এক যুবক বলছেন, ‘শহরে তো যানবাহনের জন্য হরেক কিসিমের অ্যাপ রয়েছে। আমাদের এখানে তো সে সব সুবিধা নেই। আমাদের আছে টোটো। এখানে অ্যাপ ডাউনলোডের ঝক্কি নেই। ওটিপি-র ঝঞ্ঝাট নেই। ভাড়াও খুব বেশি ওঠানামা করে না। এই টোটোই আমাদের কাছে ওলা। তাছাড়া ফোনে টোটো-ওলা বলেই তো চালকদের মোবাইল নম্বর সেভ করে রাখি।