Monday, 3 November, 2025
3 November
Homeউত্তরবঙ্গSiliguri: জ়ুবিনমন্ত্রে ‘জেন-জ়ি’ বিক্ষোভ মমতার বিরুদ্ধে, রাজ্যপালকে ‘ফোটোশুট’ তির, শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক...

Siliguri: জ়ুবিনমন্ত্রে ‘জেন-জ়ি’ বিক্ষোভ মমতার বিরুদ্ধে, রাজ্যপালকে ‘ফোটোশুট’ তির, শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক এলাকার প্রতিবাদী তরুণ সায়ক ঘটক!

তরুণের নাম সায়ক ঘটক। শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্ক এলাকার বাসিন্দা এই ২২ বছুরে।

অনেক কম খরচে ভিডিও এডিটিং, ফটো এডিটিং, ব্যানার ডিজাইনিং, ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং মার্কেটিং এর সমস্ত রকম সার্ভিস পান আমাদের থেকে। আমাদের (বঙ্গবার্তার) উদ্যোগ - BB Tech Support. যোগাযোগ - +91 9836137343.

জটলার মধ্য থেকে ভেসে আসছে, ‘‘স্যর, ফটোশুট কেমন হল? কেমন হল ফটোশুট? স্যর, এটা কি ফটোশুটের মঞ্চ হয়ে গেল? প্রতি বছর কেন দুর্যোগে বিধ্বস্ত হয়? স্যর, এটা তো স্টেট স্পনসর্‌ড ফ্লাড!’’

দার্জিলিঙের বিধ্বস্ত দুধিয়া সেতুর জমায়েত থেকে বাক্যগুলো ভেসে আসছে। শুনছেন পশ্চিমবঙ্গের মহামহিম রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বলছেন এক ভুঁইফোড় তরুণ! অল্পক্ষণ নাকি অনেকক্ষণ? খানিক শাসানি দিয়ে রাজ্যপালের নিরাপত্তারক্ষীরা সেই তরুণকে সরিয়ে দিয়েছিলেন অকুস্থল থেকে। কিন্তু তাতে রোদচশমা আঁটা রাজ্যপালের ‘অস্বস্তি’ কারও নজর এড়ায়নি।

আরও পড়ুনঃ আটপৌরে সাজ, নিজের হাতে ভোগ রান্না, কালীপুজোয় ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী

তরুণের নাম সায়ক ঘটক। শিলিগুড়ি বাঘাযতীন পার্ক এলাকার বাসিন্দা এই ২২ বছুরে। তিনি গিয়েছিলেন বিধ্বস্ত দার্জিলিঙে ত্রাণ বিলি করতে। শিলিগুড়ি ফিরতেই ফোন আসতে শুরু করে সায়কের কাছে। তিনি জানাচ্ছেন, ফোন করেছিলেন শিলিগুড়ির স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। কারণ, তাঁদের কাছে রাজ্যপালকে প্রশ্ন মানেই ‘আমাদের লোক’। তখনও অবশ্য তাঁরা জানতেন না, ‘পিকচার’ বাকি আছে।

দুর্গাপুরে মেডিক্যাল পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগের পরে এই সায়কই বিক্ষোভের ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের ফোনকারী নেতাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে! সেই বিক্ষোভে শ্রদ্ধা জানালেন প্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গার্গকে। মমতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মঞ্চ থেকেই জ়ুবিনকে শ্রদ্ধা কেন? ‘জেন জ়ি’র সম্ভবত এটাই দস্তুর। জ়ুবিনমন্ত্র ধার করে সায়ক বলছেন, ‘‘প্রতিবাদই তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কারণ আমার কোনও ধর্ম নেই, আমার কোনও জাতি নেই। আমি মুক্ত। আমিই কাঞ্চনজঙ্ঘা।’’ সেই প্রতিবাদের মঞ্চে গান হয়েছে, ‘র‌্যাপ’ হয়েছে, কবিতাপাঠ হয়েছে। দুর্গাপুরের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর কিছু মন্তব্য নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলেন সায়ক একাই। ‘জেন জ়ি’-র প্রতিনিধি হিসাবে। যে ‘জেন-জ়ি’ নেপালে সরকার ওলটপালট করে দিয়েছে। লাদাখে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সায়কের ডাকে জড়ো হয়েছিলেন শ’খানেক তরুণ-তরুণী।

কিন্তু ‘পিকচার’ তখনও আরও বাকি ছিল। মমতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শেষ হতে না হতেই সায়কের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে শিলিগুড়ির বিজেপি এবং সিপিএমের একাংশ। কারণ, তারাও ‘প্রতিবাদী’ চায়।

পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদী উত্থানের ইতিহাস সুদীর্ঘ। স্বাধীনতা আন্দোলনের পর্ব থেকে তা চলে আসছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান প্রশান্ত রায়ের কথায়, ‘‘স্বাধীনতা আন্দোলনে আমরা যাঁদের কথা জানি, তাঁরা সকলেই প্রতিবাদী। ছোট ছোট জায়গায়, বিভিন্ন ধারার আন্দোলনের মাধ্যমে তাঁদের উত্থান হয়েছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের মাধ্যমেই উত্থান হয়েছিল বিরসা মুন্ডার। সিধো-কানহুও তা-ই। এমন অনেক নাম রয়েছে।’’ স্বাধীনতার পরে নকশাল আন্দোলনও উত্তরবঙ্গ তো বটেই, সারা রাজ্যেই অজস্র প্রতিবাদীর জন্ম দিয়েছিল। চারু মজুমদার, জঙ্গল সাঁওতাল, কানু সান্যাল, আজ়িজুল হক, অসীম চট্টোপাধ্যায়— তালিকা দীর্ঘ। সাম্প্রতিক অতীতে বাম জমানায় জঙ্গলমহলে আদিবাসী মহল্লায় উত্থান হয়েছিল ছত্রধর মাহাতোর। গোড়ায় তাঁর উত্থানের মঞ্চ হিসাবে ‘পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি’ থাকলেও পরে ছত্রধর রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় চলে যান। মাওবাদী যোগে গ্রেফতার হন। জামিন পেয়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

মমতার জমানাতেও প্রতিবাদীদের উত্থান হয়েছে। কামদুনির টুম্পা কয়াল-মৌসুমি কয়ালেরা এক সময়ে প্রতিবাদের ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রশ্ন করেই। মমতা তাঁদের মাওবাদী এবং সিপিএম আখ্যা দেওয়ায় আরও জোরাল হয়েছিল তাঁদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি। মুখ্যমন্ত্রীর মমতাকে প্রকাশ্য সভায় সারের দাম নিয়ে প্রশ্ন করে গ্রেফতার হয়েছিলেন জঙ্গলমহলের শিলাদিত্য চৌধুরী। টুম্পা-মৌসুমিদের মতো তিনিও একদা হয়েছিলেন প্রতিবাদের ‘মুখ’। সুটিয়ায় গণধর্ষণের প্রতিবাদে মঞ্চ গড়ার অন্যতম কারিগর শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস খুন হয়েছিলেন ২০১২ সালে। বরুণ এখনও অনেকের কাছে প্রতিবাদের ‘মুখ’। আবার আরজি কর আন্দোলনের পর্বে মেয়েদের রাতদখলের ডাক দিয়ে ‘মুখ’ হয়ে উঠেছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিংহ।

আরও পড়ুনঃ বোধগম্যহীন মানুষ! ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, দীপাবলির রাতে নামল আঁধার; কলকাতার বাতাসে বারুদের গন্ধ, ‘গিলে খেল’ আগুনের লেলিহান অগ্নিশিখা

বঙ্গের ইতিহাসে যেমন প্রতিবাদীদের উত্থান লেখা রয়েছে, তেমনই আবার পতনের কাহিনিও আছে। অনেকে প্রতিবাদের সরণিতে টিকে রয়েছেন। অনেকে সময়ের নিয়মে পথভ্রষ্ট হয়েছেন। অনেকে পথ বদলেছেন। বি-টেক পাশ করা সায়ক চা পাতা এবং পর্যটনের ব্যবসা করেন। তার সঙ্গেই জারি রাখতে চান প্রতিবাদের অভ্যাসও। তবে যেতে চান না কোনও রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়। যে পদ্ধতিকে ইদানীং ‘ফ্রিল্যান্স অ্যাকটিভিজ়ম’ বলে পরিচিত হয়েছে। আপাতত সায়কের লক্ষ্য মাদকবিরো‌ধী আন্দোলন গড়ে তোলা। তারপরে সংখ্যালঘু মহল্লায় পৌঁছে তাঁদের বোঝাতে চান, অপরাধমূলক কাজে সংখ্যালঘু অংশের জড়িয়ে পড়া কী ভাবে রাজ্য জুড়ে মেরুকরণের আবহকে তীব্রতর করছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে উত্থান হয়েছে এক প্রতিবাদীর। যিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’

এই মুহূর্তে

আরও পড়ুন