কুশল দাশগুপ্ত, শিলিগুড়িঃ
জলের দাবিতে রবিবার রাতে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হল উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সন্ধ্যা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের ল’ মোড় আটকে বিক্ষোভ দেখান আবাসিকরা। ইঞ্জিনিয়ারদের ঘিরেও দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই জল মিলছে না ক্যাম্পাসের চম্পলা এবং বিবেকানন্দ হস্টেলে। জল নেই হস্টেল সংলগ্ন শিক্ষক আবাসন, অতিথিশালাতেও। দফায় দফায় সমস্যার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও সুরাহা মেলেনি। প্রতিবাদে রবিবার সন্ধ্যায় হস্টেল থেকে পড়ুয়ারা থালা-বাটি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ শুরু করেন। তবে এদিন রাত পর্যন্ত কাজ করেও জলসমস্যা মেটাতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কর্মীরা।
আরও পড়ুনঃ কোচবিহারে বিনা লাইসেন্সের অগুন্তি পলিক্লিনিক! সরকারি কোষাগারে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতি
কেন হঠাৎ করে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তিনদিন কেটে গেলেও তা এখনও বুঝেই উঠতে পারেননি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আধিকারিকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ গুনের বক্তব্য, ‘আমাদের কাছে টেকনিকাল বিভাগের কোনও ইঞ্জিনিয়ার না থাকায় আমরা সমস্যার গোড়ায় পৌঁছাতে পারছি না। আমাদের অন্য ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম দিন সমস্যার কথা শোনার পর থেকেই টানা কাজ করে চলেছেন। পাম্পের কিছু নতুন যন্ত্রাংশ লাগিয়েও সমস্যা মেটানো যাচ্ছে না। সোমবার বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ এনে সমস্যা মেটাতে কাজ শুরু করা হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার জন্য ছাত্রদের রাগ করাটা খুব স্বাভাবিক। দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’ তবে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের বক্তব্যে আর ভরসা রাখতে নারাজ ভুক্তভোগীরা।
বিবেকানন্দ হস্টেলের ছাত্র সুমন্ত রায়ের কথা, ‘দু’দিন ধরে আমাদের স্নান, খাওয়া কার্যত বন্ধ। খাবার জল পর্যন্ত মিলছে না। শৌচকর্মের জন্য এই হস্টেল, ওই হস্টেল ঘোরাঘুরি করতে হচ্ছে। সোমবার থেকে ক্লাস। অথচ জামাকাপড় পরিষ্কার করার জল নেই। নরকযন্ত্রণা ভোগ করছি। প্রথম দিনই যদি বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ আনা হত তাহলে হয়তো সমস্যা মিটে যেত। এখন আর কর্তৃপক্ষের কথায় ভরসা পাচ্ছি না।’
আবাসিকদের খাওয়ার জন্য শনিবার ছোট ছোট কিছু বোতলে জল দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। রবিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে শিলিগুড়ি পুরনিগমের তরফে জলের দুটি ট্যাংক ক্যাম্পাসে পাঠানো হয়েছে। তবে তাতে সমস্যা কিছুই মেটেনি। শুধু দুই হস্টেলেই আবাসিকের সংখ্যা দেড়শো। তাঁদের জন্য দুটি ট্যাংক যে পর্যাপ্ত নয় সেকথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিবেকানন্দ হস্টেলের সুপার বিনায়ক সুনদাস। তাঁর বক্তব্য, ‘শুক্রবার রাত থেকেই ছাত্ররা ভুগছে। আমরা সবটাই কর্তৃপক্ষ এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়েছি। দ্রুত জলের সমস্যা মেটা জরুরি।’
হস্টেলের আবাসিক সামিউল সরকারের কথা, ‘আমরা সমস্যা মেটানোর জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছি। কষ্ট সহ্য করেছি। তবে আর পারছি না।’ সোমবার জল না পেলে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ভাস্কর বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে দিন কাটাচ্ছে তা আমার জন্য লজ্জার। বিষয়টি পুরোটাই টেকনিকাল। চিফ ইঞ্জিনিয়ার সবটা জানেন। ওঁর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রয়োজনে বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে এসে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ করতে বলেছি।’